আহসান হাবিব
একটি বন্যপ্রাণী যেকোনো গৃহে নিয়ে এসে পালন করুন এবং মানুষের যা কিছু সংস্কৃতি তা দিয়ে তাকে শিক্ষিত করে তুলতে চেষ্টা করুন, দেখবেন সে মানুষের সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে পারবে না। বানর কিংবা শিম্পাঞ্জি হয়তো কয়েকটা দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারবে, কিন্তু তা কেবল অনুকরণের পর্যায়ে থেকে যাবে। মানুষ বহু যুগ থেকে গরু পালন করছে, কুকুর পালন করছে এবং আরও বেশকিছু প্রাণী, কিন্তু তারা ঠিক সেই পশুটিই রয়ে গেছে। আবার কোনো নবজাতক শিশুকে বনে রেখে আসুন, সেটা হতে পারে সিংহ কিংবা নেকড়ের কাছে, দেখা যাবে সে তাদের সবকিছু আয়ত্ত করে ফেলছে। সে চারপায়ের মতো হাঁটতে থাকে, তাদের মতো ধ্বনি উচ্চারণ করতে থাকে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে জীবতাত্তি¡কভাবেই পার্থক্য রয়েছে। বন্যপ্রাণী যে উত্তরাধিকার পায় তা জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকশিতভাবেই পায়, আর বিকাশ ঘটে না, কিন্তু মানুষের বেলায় একদম আলাদা। সে এমন একটি মানবিক স্নায়ুতন্ত্র পায় যা বহিঃস্থ সামাজিক অবস্থার সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়ার করে বিকাশ লাভ করে। একটা মানবশিশু বনে থাকলে সে বনের পশুদের বৈশিষ্ট্য আয়ত্ত করতে সক্ষম আবার একই শিশুটিকে যদি মানবসমাজে আনা হয়, তাহলে সে কিছুদিনের মধ্যেই মানব সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ জীবতত্ত¡ভাবেই মানব প্রজাতি এবং অন্য প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য আছে।
জন্মের সময়ই বন্যপ্রাণীরা তাদের সব বৈশিষ্ট্য পেয়ে যায় এবং সারাজীবন তাই দিয়ে বাঁচে। কিন্তু মানুষ যে উত্তরাধিকার পায়Ñ জীবতত্ত¡ এবং সামাজিক- তা দিয়ে তার জীবন শুরু হয় এবং বিকাশ লাভের উপাদান হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সামাজিক সম্পর্কের সংস্পর্শে এসে যে নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তা তার বিকাশের খাতায় যোগ হতে থাকে। অর্থাৎ মানুষের মানুষ হয়ে ওঠা, বিকশিত দক্ষ সৃজনশীল হয়ে ওঠার জন্য প্রতিদিনই চেষ্টা জারি রাখতে হয়। এই বৈশিষ্ট্য তার স্নায়ুতন্ত্র যোগান দেয়। এ জন্যই পৃথিবীতে সমাজব্যবস্থার রূপ যেখানে যেমন, সংস্কৃতির রূপও ঠিক তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সমাজব্যবস্থায় মানবপ্রজাতির বিকাশের প্রধান মানদ। লেখক : ঔপন্যাসিক