কিযী তাহ্নিন: কিসমত আলীর প্রিয় ফুল চাঁপা। ওই যে নজরুলের একটা গান আছে না, ‘চাঁপা এনে দাও, নয় বাঁধবো না চুল।’ ছোটবেলায় বড় বোন শেফালী গানের মাস্টারের কাছে দুলে দুলে গাইতো, ‘বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল, ... চাঁপা এনে দাও, নয় বাঁধবো না চুল।’ সেই গান শুনতে শুনতে কিনা, জানি না, তবে কিসমত আলীর প্রিয় ফুল হয়ে গেলো চাঁপা ফুল। সেই ফুলের নামে বাড়ির নাম রাখলেন, ‘চাপা কুঠির’, কেমন করে যেন বাড়ির নাম থেকে চন্দ্রবিন্দুটা বাদ হয়ে গিয়েছিলো। চন্দ্রবিন্দু ছাড়াই বেশ চলছে। তিন সন্তানের নাম রাখলেন, কাঁঠালি চাঁপা, দোলন চাঁপা, কনক চাঁপা। দোলন, কনকের নাম সুন্দর, ঝরঝরে, কাব্যিক। কাঁঠালির নামটা মাঝখান দিয়ে বেয়াড়া, খাপছাড়া। এই নাম নিয়ে কী ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে, সেটা নিয়ে আলাদা গল্প আছে। আচ্ছা, কাঁঠালি, দোলন, কনক নাম শুনে মনে হচ্ছে তিনজনই কন্যা সন্তান? ভুল। তারা দু’বোন এক ভাই। কে ভাই, কে বোন সেটা বলবো না। আজকের ঘটনায় সেটা মুখ্য নয়। কিসমত সাহেব সময়ের চেয়ে আগে চলা মানুষ। ‘নামের আবার ছেলেমেয়ে কী? একটা নাম হলেই হলো’ ধরনের মনোভাবের মানুষ। ঘটনা হলো, তিন ভাইবোন গেছে স্টেশনে। যে ভিড়, চাপাচাপি। আগে থেকে টিকেট কাটা থাকলেও, ওঠার কোনো সিস্টেম পাওয়া যাচ্ছে না। ভিড়-ঠেলাঠেলি, গুঁতোগুঁতির পর ট্রেন ছেড়ে দিলো। দোলন আর কনক ট্রেনে। আর কাঁঠালি পড়ে রইলো, স্টেশনে। বিরস বদনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবলো, বাপ না জানি আজকে কী ঝাড়ি দেয়। ট্রেন মিস করে বিরস মুখে বাড়ি ফিরলো কাঁঠালি। কাঁঠালিকে খালি হাতে ফিরতে দেখে তো কিসমত সাহেবের ‘হায় হায়’ অবস্থা।
কিসমত সাহেব: ‘হায় হায় তুই?’ কাঁঠালি: ‘হু আমি।’ কিসমত আমি: ‘কেন কেন, তুই কেন? তোর না সিলেট তোর নানীর বাড়ি যাওয়ার’ কাঁঠালি: ‘কথা ছিলো। ট্রেন মিস...’ কিসমত সাহেব: ‘বলিস কী! তোর ব্যাগ কই?’ কাঁঠালি: ‘দোলন-কনকের কাছে।’ কিসমত সাহেব: ‘দোলন-কনক কই?’ কাঁঠালি: ‘ট্রেনে’ ‘ট্রেনে নে নে। তারা!’ বলতে বলতে কিসমত সাহেব মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। প্রেশার বেড়ে গেছিলো। এখন ঠিকঠাক। ঘটনার আকস্মিকতায় ভিরমি খেয়েছিলেন। পরীক্ষা শেষ, তাই ছুটিতে নানী বাড়ি যাওয়ার কথা শুধু কাঁঠালির। কনক-দোলন গেছিলো তাকে স্টেশনে পৌঁছে দিতে। ভিড় দেখে কনক-দোলন কাঁঠালির ব্যাগ ওঠানোর চেষ্টা করতে করতে নিজেরাই ট্রেনে ওঠে ভিড়ের মাঝে আটকে গেছে। আর কাঁঠালি ভিড় ঠেলে ট্রেনে ওঠার আগেই ট্রেন ছুট।
কনক-দোলন ভীষণ খুশি, ‘যাক বাবা দুইজন তো ওঠতে পারলাম। আমরা নেমে গেলে পুরো টিকেটটাই তো লস হতো।’ ঘটনা শুনে কিসমত সাহেবের মাথা ঘূর্ণিভাব কমেছে। ছেলেমেয়েদের যতো বোকা ভাবতেন, ততো বোকা তারা নয়। এক টিকেটে দু’জন ট্রেনে চড়ার বুদ্ধি তারা শিখে গেছে। শুনেছিলেন, নামের প্রভাব চরিত্রে পড়ে। ভাবছেন তাদের নামের, ‘চাঁপা’র চন্দ্রবিন্দুখানা উঠিয়ে দেবেন, তার বাড়ির নামের মতো। তাতে বুদ্ধি আরেকটু ধারালো হবে, চাপাটাও। এর পরেরবার তারা নিশ্চয়ই এক টিকেটে তিনজনই ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবে। সেই ভাবনা ভেবে, কিসমত সাহেবের মুখে হাসি কেমন রঙিন হয়ে লেপ্টে থাকে চোখেমুখে, একদম যেন সদ্য ফোটা চাঁপা, নানা রঙের চাঁপা, চাঁপা..॥ Kizzy Tahnin-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।