সোহেল রানা, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: সর্বশেষ ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচন। এরপর মেয়াদ শেষ হলেও নানা আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন হয়নি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসন শেষে ১০ বছর পর পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চলতি মাসের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাতে বহু প্রত্যাশিত শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আটসাট বেঁধে প্রার্থীরাও যেমন ভোট যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হচ্ছেন, ঠিক তেমন দীর্ঘদিন পর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আশায় ভোটাররাও অধির আগ্রহে দিন পার করছেন ভোটের সময়ের অপেক্ষায়।
শীত প্রধান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গল শহরের পাড়া মহল্লা আর অলিগলিতে এরই মধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে ভোটের আমেজ। নির্বাচনে মেয়র পদে তিনবারের নির্বাচিত বর্তমান মেয়র,বিশিষ্ট শিল্পপতি মহসিন মিয়া মধু হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক এর সাথে।
নির্বাচনে মূলত এ-দুই প্রার্থীর মধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে বর্তমান মেয়র মহসিন মিয়া মধুর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক ভোটের মাঠে এবারই নতুন। মহসিন মিয়া মধু শ্রীমঙ্গল পৌরসভার অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন।
অত্যাআধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণ,পৌর মার্কেট নির্মাণ,সুপ্রসন্ন ফুটপাত ও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট সংস্কার, স্বাস্থ্যসম্মত পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তাঁর এই সময়ে। এক কথায় মডেল পৌরসভা বির্নিমাণে যা যা প্রয়োজন তার সবটুকুই তিনি করেছেন।
পৌর নির্বাচন নিয়ে আলাপকালে,স্থানীয় রিক্সা চালক আবু তাহের বলেন,আমরা শ্রীমঙ্গল শহরে রিক্সা চালাই কোনো চাঁদা দেইনি। তাই আমরা এবারও পৌরসভার নির্বাচনে মধু ভাইকে নির্বাচিত করবো ইনশাআল্লাহ।
শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার সোনার বাংলা রোডের ব্যবসায়ী এক মহিলা বলেন,দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত শ্রীমঙ্গলে ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছি, যখনই পৌরসভার মেয়র মধু ভাইকে প্রয়োজন হয়েছে,তখনি পাশে পেয়েছি। তাই আমরার লাগি (আমাদের জন্য) মধু ভাই বালা (ভাল) আমরা সাধারণ মানুষ,আমরা যারে কাছে পাই তারেই নির্বাচনে ভোট দিমু।
এ বিষয়ে আলাপকালে পৌর মেয়র মহসিন মিয়া মধু বলেন আমি জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। জনগণই নির্ধারণ করবেন তাদের মালিকানা। জনগণের ভোট ছাড়া তো কেউ মেয়র হতে পারবে না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় শ্রীমঙ্গল শহরকে চাঁদাবাজ মুক্ত রাখেছি। আমার বড় শক্তি এই শহরের মানুষ,বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ নানা শ্রেনী পেশার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ।
তফসিল ঘোষণা পর বেশ কয়েকটি নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি,যেখানে আমার প্রতিটি বৈঠকে হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়ে আমার প্রতি তাদের সমর্থন পূর্ণব্যক্ত করেন। আরও বলেন,আমি শ্রীমঙ্গল শহরের সামগ্রীক উন্নয়নের পাশাপাশি কয়েক বছর পূর্বে এখানকার পিচিয়ে পড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে গড়ে তুলেছি প্রায় আড়াই হাজার কিশোরীদের অংশগ্রহনে কিশোরী ক্লাব।
যেখান থেকে কিশোরীরা সাংকৃতি,ইংরেজী ভাষাসহ নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি উপজেলা পর্যায়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মত উন্নত পৌরসভা একটিও নেই সারা দেশে। পৌরসভার জন্য স্থানীয় সরকার ও এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার ম্ধ্যামে বিগত দিনে অভুতপূর্ব উন্নয়ন করতে পেরেছি।এই উন্নয়ন আর নিরাপদ নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখতেই নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হয়েছি,আমি কোন দলের প্রার্থী নই,আমি জনগণের প্রার্থী।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী মাঠ সরব হয়ে উঠছে। ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত শ্রীমঙ্গল পৌরসভার আয়তন ২ দশমিক ৫৮ বর্গ কিলোমিটার। এই পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৯৪ জন।
আপনার মতামত লিখুন :