জাহিদ হোসেন
ছেলেমেয়েরা বড় হলে প্রেম করতে চাইবেই। খিদে পেলে খেতে চাওয়ার মতোই এটা স্বাভাবিক আর প্রাকৃতিক চাওয়া। আর প্রেম মানেই হলো একপর্যায়ে একটা একটা টাচি-ফিলি ব্যাপার যার চ‚ড়ান্ত পরিনতি যৌনমিলন। এবসটিনেন্স (abstinence) সবাই পারে না। বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করার ধৈর্যও সবার থাকে না। এর প্রয়োজনও সবাই সমানভাবে অনুভব করে না। তাহলে উপায়? উপায় হলো, সঠিক যৌনজ্ঞান। সঠিক যৌনজ্ঞানই পারে অনেক বিপদ থেকে আমাদের বাচ্চাদের রক্ষা করতে।
নিজের কথা বলি। যখন ছোট ছিলাম, বয়ঃসন্ধিকাল, শরীরে পরিবর্তন আসছে, মনে তার নিত্য দোলা, নারীবিষয়ে অসীম কৌত‚হল। তখন উপযুক্ত কোন তথ্যভান্ডার ছিলো না। কাউকে প্রশ্ন করে জানবো সেই সুযোগও ছিলো না। পাঠ্য-পুস্তকে কিছুই নেই। হকারের মজমা আর পাকনা টাইপ বন্ধুÑ এই ছিলো ‘জ্ঞানের’ উৎস। ভয়ঙ্কর সেই সব জ্ঞান। দু’একটা উদাহরণ দিই ৮০ ফোঁটা রক্তে একফোঁটা বীর্য সুতরাং সেই বীর্য কোনোভাবে নষ্ট হলে অপূরণীয় ক্ষতি, ফলশ্রæতিতে ধ্বজভঙ্গ রোগ, মানে হলো নারীকে সন্তুষ্ট করতে না পারা, কারণ পুরুষের চেয়ে নারীর যৌনশক্তি ৮ গুন বেশি ইত্যাদি। অর্থাৎ নারী মানে, যৌনমিলনের ক্ষেত্রে প্রবল প্রতিপক্ষ এবং তাঁকে পরাস্ত করাই পুরুষ জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আর এর জন্য দরকার ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিলনে সক্ষম একটি বড় লৌহকঠিন পুরুষাঙ্গ! ব্যাস। প্রেম না, পূর্বরাগ না, শৃঙ্গার না, কেবল পুরুষাঙ্গকেন্দ্রিক আসুরিক শক্তি থাকলেই তুমি পুরুষ।
এই ‘জ্ঞান’ নিয়ে বড় হচ্ছিলাম কিন্তু অন্তরে অশান্তি ছিলো। অনেক প্রশ্ন আসতো মনে, ভাবতাম প্রেম কোথায় তবে? নারীকে ভালো না বেসে কি সঙ্গম করা যায়? এই যে নারী-পুরুষের জগদ্বিখ্যাত সব প্রেম কাহিনি, সেগুলো কি কেবল আসুরিক যৌনতা? এই যে শেক্সপিয়ার বলছেন, ‘If I should think of love, I'd think of you" A_ev "it is the east, and Juliet is the sun" এখানে পুরুষাঙ্গ কোথায়? এখন অবস্থা তেমন না। প্রচুর বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের প্রবাহ আছে এখন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এসবের অপব্যবহারও প্রচুর। এই বিষয়ে তাই আমার কিছু পরামর্শ আছে।
বাবা-মায়েদের উদ্দেশে : নিজে জানুন, বাচ্চাদের জানান। যতোটা সম্ভব স্পষ্ট করেই জানান। মেয়ে-শিশুরা সহজেই মায়ের সাথে শারীরিক ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ হতে পারে। সমস্যা হলো ছেলেশিশুদের। বাবারা দূরের, মায়েদের সাথেও সংকোচ। বাবা-মা দুজনে আলোচনা করে সমাধান বের করুন। মনে রাখবেন, আপনি না বললেও তাঁরা জানবে। জানবেই যখন, আপনার কাছ থেকে ঠিকটাই জানুক। বই কিনে দিন, বিদ্যুৎ মিত্রের ‘যৌনজ্ঞান’, আবুল হাসানাতের ‘যৌনবিজ্ঞান’, বাৎস্যায়নের ‘কামসূত্র’।
ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে : [১] বই পড়ুন (চটি নয়)। সিনেমা দেখে শেখার চেষ্টার চেয়ে বই পড়ে শেখা ভালো। এতে কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে। বড় হলে দেখবেন, যৌনতায় কল্পনার ভ‚মিকাই বেশি। [২] ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন তবে তা যেন পর্নোগ্রাফি দেখায় রূপ না নেয়। পর্নোগ্রাফি সত্যিকার প্রেমময় যৌনতা নয়, বরং প্রচুর মিথ্যার সমষ্টি। [৩] যৌন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আকার গঠন ইত্যাদি নিয়ে কোনো অহেতুক অহংকার বা হীনম্মন্যতা থাকলে দূর করে ফেলুন। পরিপূর্ণ ও সুখী যৌনজীবনে এসবের ভ‚মিকা অতি সামান্য।
[৪] যৌনতা পাপ নয়। জীবনের অনিবার্য আনন্দের উৎস। একে সম্মান করুন, উপভোগ করুন। সকল প্রাণীর যৌনতা আছে, তবে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা যৌনতাকে প্রোক্রিয়েশন থেকে রিক্রিয়েশনে রূপ দিতে পেরেছে, ‘হ্যাভিং সেক্স’ কে ‘মেকিং লাভ’ করতে পেরেছে। [৫] লাস্ট বাট নট দি লিস্ট কখনোই নিজেদের শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ছবি বা ভিডিও মোবাইলে বা কোথাও ধারণ করবেন না। মোবাইল হারিয়ে যেতে পারে। আজকের প্রেমিক কালকের বকমেইলার হয়ে যেতে পারে।