সুজন কৈরী: [২] রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে আদনান সাকিব (২৫) নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত আদনান ঢাবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
[৩] বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়।
[৪] পুলিশ হোটেলের কক্ষ থেকে একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে আদনান তার মৃত্যুর জন্য কারও দোষ নেই বলে লিখে গেছেন।
[৫] মৃত আদনানের সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, আদনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে বর্ধিত ভবনের ৩০০৫ নম্বর রুমে। তার বাড়ি নীলফামারীতে।
[৬] শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, গত ২৬ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আদনান। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রী থানায় জিডি করেন। এরপর আদনানের মোবাইল নম্বর ট্রাকিং করলে সেগুনবাগিচার কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে তার অবস্থান পাওয়া যায়। পরে রাত দেড়টায় ওই হোটেলে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন খাতায় তার নাম দেখা যায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দিতে হোটেলে উঠেছেন বলে জানিয়েছিলেন। পরে হোটেলে দ্বিতীয় তলায় ১০৭ নম্বর রুমে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। এরপর রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় ফ্যানের সঙ্গে নাইলনের রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে ঝুলছেন আদনান। তখন সেখান থেকে মরদেহ নামিয়ে মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
[৭] মৃত আদনানের সহপাঠীদের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, সাকিব দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সবকিছুই ভুলে যেতেন। এসব কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। গত পরশু সন্ধ্যার পর থেকে পরিবার তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলো না। ফোনে কল হলেও রিসিভ করছিলেন না তিনি।
[৮] মওদুত হাওলাদার বলেন, হোটেলের ওই কক্ষ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। যেখানে আদনানের জীবনের হতাশার কথা তুলে ধরা আছে। তিনি লিখেছেন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি হতাশ। তবে আমার স্ত্রী ভালো মানুষ। তার কোনো দোষ নেই।
[৯] বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, রাত দুটার দিকে আমাদের কাছে বেদনাদায়ক খবরটি আসে। তখন দুজন হাউজ টিউটরসহ মোবাইল টিমের দুজন দিয়ে কর্ণফুলী হোটেলের ১০৭ নম্বর রুম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩০০৫ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলো। ঘটনার পর আমরা জানতে পারি সে বিবাহিত ছিল। দুদিন ধরে তাকে ফোনে না পেয়ে তার স্ত্রী থানায় জিডি করে। এরই সূত্র ধরে পুলিশ তাকে সেগুনবাগিচায় কর্ণফুলী হোটেল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।