হাসান শান্তনু: কবি ফরিদা মজিদের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের 'প্রগতিশীল সরকার' সম্ভবত 'বেশি শোকে কাতর' হয়ে পড়েছিলো! সেজন্যই হয়তো গতকাল মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যুর পর শোকবাণী তেমন ছিলো না। অথচ খ্যাতিমান এ কবি, অনুবাদক আমৃত্যু ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে নিরলস সংগ্রামী ছিলেন। বায়াত্তর সালের সংবিধান অবিকল পুন:বর্হাল, নারীর স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন সোচ্চার। তাঁর মৃত্যতে সরকারি-বেসরকারি রাজনৈতিক দলগুলো শোকবার্তা প্রকাশের সময়ও পেলো না!
ফরিদা মজিদ দীর্ঘকাল প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বিদেশে বসে দেশের বড়ো কবি, সাহিত্যিকদের লেখা অনুবাদ, সম্পাদনা, প্রকাশনার কাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরেছেন বিশ্বসাহিত্যের কাছে। মাতৃভাষার সাহিত্যের এ ফেরিওয়ালা সরকারি কোনো পুরস্কার পাননি। অথচ ছাঁইপাশ মার্কা বইয়ের লেখক, কবিরা কতো পুরস্কার ভাগিয়ে নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে তিনি ২০০৬ সালে দেশে ফিরে আসেন। পুরস্কার-টুরস্কারেরর জন্য তিনি তেলবাজি, দলবাজি করেননি।
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছিলেন- 'স্রষ্টার পরে কবিরা সবচেয়ে স্বাধীন সত্তা'। ফরিদার সত্যিকার স্বাধীন সত্তা ছিলো বলেই পুরস্কারের জন্য তদ্বির করেননি। আত্মীয়তার সম্পর্কে তিনি কবি গোলাম মোস্তফার নাতনি ছিলেন। গোলাম মোস্তফাকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক লেখায় বলেছিলেন 'গোলমাল মোস্তফা'। বিষয়টির উল্লেখ করে মৃত্যুর পর ফরিদা মজিদকে নিয়ে 'ঠাট্টাতামাসা' করে গতরাতে নিজের ফেসবুক দেয়ালে স্ট্যাটাস দিয়েছন আরেেক কবি! নানার সমালোচনার দায় নাতনির উপরও বর্তায় মৃত্যুর পর!
ফরিদা মজিদের আলোচিত কবিতার বই 'গাঁদা ফুলের প্রয়াণ ও যারা বেঁচে থাকবে'। কবিতার মতোই প্রয়াণের পরও তিনি বেঁচে থাকবেন পাঠকের মনে। বিনম্র শ্রদ্ধা, তাঁর আত্মার শান্তি কামনা। উল্লেখ্য, ছবিতে বিট আন্দোলনের পুরোধা, প্রখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের সঙ্গে কবি ফরিদা।