খালিদ আহমেদ: [২] অবশেষে প্রশাসনের আশ্বাসে ৯ দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরলেন বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার কিশোর বাউল মেহেদী হাসান। মাথা ন্যাড়া ও নির্যাতনের শিকার হওয়া গ্রাম ছেড়েছিলেন তিনি।
[৩] তবে বাড়িতে ফিরলেও আসামি পক্ষের মামলা তুলে নেওয়ার চাপ আর বাকি আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মেহেদী।
[৪] নির্যাতনের শিকার বাউল শিল্পী মেহেদী জানিয়েছেন, বাড়িতে ফিরলেও মাথায় চুল না থাকায় গানের অনুষ্ঠানে ডাক পড়ছে না তার। এতে জীবিকা নির্বাহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
[৫] সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, বাউল-চর্চা যে কারো জন্মগত অধিকার। নিপীড়নের সঙ্গে যুক্তদের বিচার নিশ্চিত না হলে সমাজে এ ধরনের অপকর্ম বন্ধ করা কঠিন।
[৬] ১৬ বছর বয়সী মেহেদী গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউল গান গেয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পান। এজন্য গ্রামের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তাকে প্রায় গালাগাল করতো। গান ছেড়ে দিতে বলতো। সাদা লুঙ্গি ও ফতুয়া পরা যাবে না এবং মাথার চুল বড় করলে গ্রাম ছাড়া করা হবে এমন হুমকিও দিতেন তারা। এসবের প্রতিবাদ করায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেদীকে ঘুম থেকে তুলে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার পাশাপাশি তাকে কান ধরে উঠবস করান পাঁচ আসামি।
[৭] ঘটনার দিন রাতেই পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মেহেদী। পাঁচ আসামির মধ্যে গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম (৫২), একই গ্রামের শফিউল ইসলাম খোকন (৫৫) ও তারেক রহমানকে (২০) ওই রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। মামলার অন্য দুই আসামি ফজলু ও তাহের এখনো পলাতক রয়েছেন।
[৮] ওই ঘটনার পর ভয়ে গ্রাম ছাড়েন মেহেদী। প্রশাসনের সহায়তায় ২৭ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
[৯] বগুড়া জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারন সম্পাদক এবিএম জিয়াউল হক বাবলা বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং মৌলবাদী চক্রের দৌড়াত্মের কারণে এ ধরনের ঘটনা কমছে না। দ্রুত মেহেদীর ওপর নির্যাতন চালানো বাকি মাতব্বরদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
[১০] শিবগঞ্জ উপজেলা ইউএনও উম্মে কুলসুম শম্পা জানিয়েছেন, মেহেদী হাসানের বাউল-চর্চা নির্বিঘ্ন করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
[১১] তবে এই বর্বর নিপীড়নের পর স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও তেমন কেউ এখনো মেহেদীর পাশে দাঁড়ায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :