মাসুদ আলম:[২] র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ধামাকা শপিং ডট কম’-এর কোনো প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই। নেই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছে ধামাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ‘ধামাকা ডিজিটাল’ ২০২০ হতে ‘ধামাকা শপিং ডট কম’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র লাখ খানেক টাকা।
[৩] তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নামে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে ধামাকার কাছে সেলাররা পাবে প্রায় ১৮০-১৯০ কোটি টাকা। ধামাকার কাছে কাস্টমার পাবে ১৫০ কোটি টাকা। এছাড়া কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া আছে ৩৫-৪০ কোটি টাকা। গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকিয়ে রেখে সরিয়ে ফেলা ছিলো ধামাকায় উদ্দেশ্য। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বুধবার ভোরে তেজগাঁও থেকে ধামাকার সিওও মো. সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অন্য দুইজন হলেন- মোবাইল ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইলের ক্যাটাগরি হেড ইমতিয়াজ হাসান সবুজ এবং ক্যাটাগরি হেড (ইলেক্ট্রনিক্স)ইব্রাহীম স্বপন।
[৪] আল মঈন বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাস যাবত প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং ডিপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে; পাশাপাশি জুন ২০২১ থেকে কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। চলতি বছরের গত এপ্রিল হতে ধামাকা অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কারণে জুলাই থেকে সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মহাখালীতে তাদের প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারি হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ছয়শটি ব্যবসায়িক চেইন রয়েছে। তারমধ্যে নামীদামী প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে।
[৫] তিনি বলেন, ধামাকা ছাড়াও তাদের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন- ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রো-ট্রেড ফুড এবং বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রো-ট্রেড আইসিক্স লিমিটেড ইত্যাদি। মূলত প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর নানাবিধ অফার দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করা হতো। এভাবে যাতে দ্রুততম সময়ে ক্রেতা বৃদ্ধি সম্ভবপর হয়।
[৬] তিনি আরও বলেন, ধামাকা শপিং ডট কম’ গ্রাহক সংখ্যা ৩ লক্ষাধিক। মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, মোটরবাইক, গৃহস্থলীপণ্য ও ফার্নিচারসহ বিভিন্ন অফারে বিক্রি করা হতো। ধামাকার বিভিন্ন লোভনীয় অফারগুলো হলো, সিগনেচার কার্ড ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, ধামাকা নাইট এ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত, রেগুলার এ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়। সিগনেচার কার্ড অফারটি গত মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। মাত্র ২০ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করে অর্থ সরিয়ে গ্রাহকদের চেক প্রদান করা হয়। অতঃপর ধীরে ধীরে সকল অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
[৭] তিনি বলেন, ধামাকা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মূলত তারা ইনভেনটরি জিরো মডেল এবং হোল্ড মানি প্রসেস প্লান ফলো করত। কয়েকটি দেশি-বিদেশী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে ‘ধামাকা শপিং ডট কম’ ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট ছিল না। গত অক্টোবর থেকে তারা এগ্রেসিভ বিজনেসে যায়। ধামাকা খুব অল্প সময়েই মোটা অঙ্কের অর্থ সরিয়ে ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ১৪টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। ধামাকার প্রতারণার মূলহোতা জসিম উদ্দিন দেশের বাইরে রয়েছেন। হাজারের উপরে তাদের কর্মী রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :