শিরোনাম
◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া? বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে আলোচনা উদ্যোগ ◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির!

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০১:৩৪ রাত
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০১:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফরিদুন্নাহার লাইলী: বাঙালির অহংকার মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা

ফরিদুন্নাহার লাইলী: আজ শেখ হাসিনার জন্মদিন। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ঘর আলো করে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নিয়েছে তাঁদের প্রথম সন্তান হাসিনা। ভালো নাম শেখ হাসিনা। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন হাসু। কে জানত এই হাসুই হবেন একদিন তাঁর বাবার যোগ্য উত্তরসূরি? বাবার দেখানো পথে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এই দেশ এবং মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন সে স্বপ্নের পথে তিনি হেঁটে চলেছেন দুর্বার গতিতে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনই অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল যেখানে দমনপীড়ন-শোষণ নির্যাতনে মানুষ ছিল অসহায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া তাঁর দুইকন্যার দেশে আশা ছিল অনিরাপদ। তারপর ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং তাঁর প্রতি লাখ লাখ মানুষের সেই সংবর্ধনা আমরা নিশ্চয়ই বিস্মৃত হতে পারি না। পিতার শোকের সান্তনা তিনি সেদিন এই মানুষদের মাঝে দেখেছিলেন এবং মনে মনে স্থির করেছিলেন পিতার অসমাপ্ত কাজ তাকেই সমাপ্ত করতে হবে এবং জীবন দিয়ে হলেও করতে হবে। এ কথা তিনি বারবার উচ্চারণও করেছেন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত গণ-সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ভাষণের শুরুতে যে কথাগুলো বলেছিলেন তা তিনি হৃদয়ে ধারণ করেন আজও। সেই মর্মস্পর্শী ভাষণের শুরুটা ছিলো এমনÑ ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ দেখছি। শুধু নেই প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইবোন, আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল, আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী সংসার ছেলে রেখে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আজ কিছু পাবার নেই। সব হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি আপনাদের ভালবাসা নিয়ে। পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্যে। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই’।

এই ফিরে আসাটিও আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য বিশাল গুরুত্ব বহন করে। কারণ শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলে এদেশের মানুষ ‘ভোট ও ভাতের অধিকার’ ফিরিয়ে পেয়েছে। গণতন্ত্র ফিরে পাবার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা সেনাশাসককে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা যখন দেশে আসেন তখন স্বৈরশাসক এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিকল্প নেই শেখ হাসিনা ভালো করেই তা জানতেন। দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের যে সংকল্প নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন তাতে প্রধান বাধা ছিল স্বৈরশাসন। সেই থেকে স্বৈরতন্ত্রকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে তিনি রাজপথে সোচ্চার ছিলেন। অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তারপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে নেতৃত্বের চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জনগণ একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন লালন করে এসেছে তা তিমিরেই থেকে গেলো। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে বিএনপি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে চরমভাবে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের কাছে।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কোনো রাজনৈতিক বচন নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুনগত একটি পরিবর্তন আসে।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের ইতিহাসে কলংকজনক আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিলেন। গাড়িতে লাল সবুজের পতাকা ব্যবহারের দায়িত্ব অর্পণ করলেন সেই তাদের যারা এদেশের স্বাধীনতায় বিরোধিতা করেছিলো; ৩০ লাখ শহীদের রক্তে যাদের হাত রঞ্জিত হয়েছিলো। দেশের পুরনো শত্রু জামায়াত নিজেদেরকে ক্ষমতায় পোক্ত করার জন্য দেশকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মানসে দেশব্যাপী জঙ্গি চাষাবাদ শুরু করে। সেই প্রমাণগুলো সবার সামনে স্পষ্ট। এদেশে বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান নামক জঙ্গি নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী একই দিন একই সময়ে ৫০০ বোমা হামলা করে নিজেদের শক্ত অবস্থান তারা জানান দিয়েছিলো। তাদের পথের মূল বাধা শেখ হাসিনাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে অনেক হামলার চেষ্টা করা হয়েছে; তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে শক্তিশালী গ্রেনেড হামলা। আহত হলেও দলীয় অসংখ্য নেতা কর্মীর ভালোবাসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান কিন্তু ঐ ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে ২৪ জনকে। অপরদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের তত্ত্বাবধানে তার আবাসস্থল হাওয়া ভবনকে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। অন্যদিকে দেশের তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখে মেনে নিতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করা শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী সমাজ তারাও প্রতিবাদ মুখোর হয় যুদ্ধাপরাধীরা যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিতাড়িত হয়। কারণ তারা স্পষ্টই বুঝতে পেরেছেন দেশকে সেই চক্র একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যাচ্ছে। সময় থাকতে সেখান থেকে বের হতে না পারলে পরবর্তীতে দেশ সঠিক পথে ফিরে আসতে অনেক বেগ পেতে হবে।

জনগণের এই প্রত্যাশাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মেনডেট দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান আওয়ামীলীগ। গতিহীন দেশে সার্বিক শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার করেছেন, দেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার করছেন। দেশের জনগণ বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা যদি দেশে না আসতেন তাহলে এদের বিচার কোনদিন কেউ এই মাটিতে করার সাহস পেতেন না, শেখ হাসিনা বলেই পেরেছেন; আর বিচার না হলে এই বীরের জাতিকে ইতিহাসে কলংক নিয়েই বেঁচে থাকতে হতো। এই বিশ্বাসটি সেই অপরাধী চক্রেরও; তাইতো তারা প্রথমেই চায়নি শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসুক। আর যখন ফিরে এসেছেন তখন ঐ ভয় তাদের তাড়া করে; যার ফলশ্রুতিতে তারা শেখ হাসিনাকে অসংখ্যবার হত্যার চেষ্টা করেছেন।
২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনডেট ছিল তারুন্যের একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। সেই রূপকল্প বাস্তবায়ন রাজনৈতিক কোন কথার ফুলঝুরি নয়; আজ তা প্রমাণিত সত্য। আর ভিশনের গতিধারা চলমান আছে বলেই জনগণের রায় নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতায় আছেন।

দেশের যেকোন সংকটে কিংবা সম্ভাবনায় মানুষের কাছে একটি আস্থাশীল নাম শেখ হাসিনা। জনগণের এই আস্থা তিনি কথা দিয়ে নয়, কর্ম দিয়ে অর্জন করেছেন। কারণ দেশের যেকোন সংকট সেটা প্রাকৃতিক হোক আর মানুষসৃষ্ট হোক শেখ হাসিনা দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করে সমাধা করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এরূপ আপসহীনতা ও আস্থাশীলতার কারণেই বিশ্বের বুকে শান্তিকন্যা শেখ হাসিনা সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তার নেতৃত্ব আজ বিশ্বনেতাদের কৌতূহল এবং আগ্রহের বিষয়েও পরিণত হয়েছে। বিশ্বের নামি দামি সংবাদ মিডিয়াগুলোর একাধিক জরিপে ইতোমধ্যে বিশ্বনেতাদের তালিকায় শেখ হাসিনার নাম সামনের সারিতে স্থান করে নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে শেখ হাসিনা তার সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শীতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেনএটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। ‘অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ওই মেয়ে/আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশ-পানে চেয়ে’

রবীন্দ্রকাব্যের চরণ দুটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যই অনেকটা প্রযোজ্য। কারণ তিনি আশাহীন, আলোহীন, ভরসাহীন, ভগ্নহৃদয় বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনীতির কঠিন-কঠোর বিপদসঙ্কুল ও বন্ধুর পথটিকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রম, ধৈর্য, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর দূরদর্শী প্রজ্ঞায় তিনি বিপদসঙ্কুল এ পথকে করেছেন জয়। সমকালীন পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় বর্ণিত রবীন্দ্রভাষ্যটি তাই তার জন্যই খাটে।

আমরা দেখেছি অন্ধকার থেকে আলোর পানে, হতাশা থেকে আশার পানে সমগ্র জাতিকে দক্ষতার সঙ্গে ধাবমান করে তোলার স্বাপ্নিক-মন্ত্রে উজ্জীবিত করে চলেছেন শেখ হাসিনা। নানা প্রতিকূ লতার অন্ধকার-আচ্ছন্নতা ছিন্ন করে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত’ দেশে উন্নীত করার অভিযাত্রা ক্রমেই তাকে বাংলাদেশের ‘জননেত্রী’ থেকে মানবপ্রেমী বিশ্বনেতায় পরিণত করে তুলছে। এমন নেতার জন্মদিন তাই বাঙালির এক বিশেষ উদযাপনেরও দিন।
লেখক: কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সাবেক সংসদ সদস্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়