ফরিদ আহমেদ: দুদিন আগে যে নির্বাচন হলো কানাডায়, সেই নির্বাচনে ফেডারেল সরকারের খরচ হয়েছে ছয়শ দশ মিলিয়ন ডলার। এটাকে টাকার অংকে রূপান্তর করলে কতো হবে সেটা জানা নেই আমার। কয়েকশ কোটি বা কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে নিশ্চিত। এই নির্বাচনটা জরুরি কিছু ছিলো না। দুই বছর আগে নির্বাচনে লিবারেল পার্টি বিজয়ী হয়েছিলো। যদিও নিরুঙ্কুষ প্রাধান্য তারা পায়নি। সেটার জন্য একশ সত্তরটা আসনে জয়ী হওয়া লাগে। লিবারেল পেয়েছিলো একশ সাতান্নটা। চতুর্থ বৃহৎ দল এনডিপির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিলো। ভালোই চলছিলো দিনকাল। এই দেশে কেউ নির্বাচিত হলে, তাকে আগেই গদি থেকে নামানোর জন্য বিরোধী দল সাধারণত মাঠে নামে না। তারপরেও লিবারেল দলের মনে হয়েছিলো যে তারা যে সমস্ত পলিসি নিয়ে এগোতে চায়, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে সেগুলো নিয়ে এগোতে পারছে না। ফলে আগাম নির্বাচন দিয়ে বসেছিলো।
সেই নির্বাচনের ফলাফল এর মধ্যেই চলে এসেছে। লিবারেল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আগের চেয়ে মাত্র একটা আসন বেশি পেয়েছে, যেটার আসলে আদতেই কোনো মূল্য নেই। বাকি দলগুলোর অবস্থানেরও তেমন কোনো হেরফের হয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনের একেবারে কার্বন কপি ফলাফল এসেছে। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে এই নির্বাচন নিয়ে। ছয়শ দশ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এমন একটা অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন নির্বাচন করার প্রয়োজনটা কী ছিলো? একটা মাত্র আসনে বেশি জেতা? এর সদুত্তর সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ জানে না। একটাই হতে পারে, দুই বছর আগে নির্বাচন করে আগামী চার বছর ক্ষমতায় থাকাটাকে পাকাপোক্ত করে নিলো লিবারেল। দুই বছর পরে হয়তো পার্টির জনপ্রিয়তা কমে যেতো, কাজেই এই সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনটা করে নেওয়া হলো। এতে আগামী চার বছর ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত হয়ে গেলো।
আমাদের বাঙালিরা দেশে থাকতেও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবি না আমরা, এখানেও না। আমাদের পছন্দের দলের, পছন্দের নেতারদের সব কর্মকাণ্ডই আমাদের কাছে অত্যন্ত ভালো লাগে। বিদেশে এসেও সেই অভ্যাসটা যায়নি আমাদের। ফলে যারা লিবারেলের সমর্থন করেন, তাঁদের মাঝে বিজয়ের উল্লাস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনের পরে। ভাবটা এমন যে লিবারেল বুঝি নতুন করে ক্ষমতায় এসেছে কনসার্ভেটিভদের হটিয়ে দিয়ে। যে কারণে তাঁরা উল্লাস প্রকাশ করে চলেছে। ছয়শ দশ মিলিয়নের বিনিময়ে বৈধভাবে আরও দুই বছর ক্ষমতায় থাকতে পারা, দলই যে আবার ক্ষমতা নিয়েছে, সেই বিষয়টা বুঝতে পারছেন না তাঁরা। এই নির্বাচন না করলেও লিবারেল আরও দুই বছর এমনিতেই ক্ষমতায় থাকতো। কাজেই এখানে উল্লসিত হবার মতো কিছু ঘটেনি। বরং ভাবনা চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে এই অর্থহীন নির্বাচনের পিছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।
এসব ভাবাভাবির মধ্যে অবশ্য আমরা নেই। তোমার ভাই, আমার ভাই, অমুক ভাই, তমুক ভাই, বলতেই বেশি ভালো লাগে আমাদের। আমরা ভক্তিবাদী জাতি। নেতা-নেত্রী, রাজনৈতিক দলদের পীর-দরবেশ বানিয়ে ভক্তি করাতেই বেশি আনন্দ আমাদের। আজ্ঞাবহ হতেই যে বেশি ভালো লাগে। এতে করে চিন্তা-ভাবনা করার মতো কঠিন কাজটা করা লাগে না। ফেসবুক থেকে