শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:৩৯ দুপুর
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: দুর্নীতি নামক ‘ব্যাধি’ যেনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যকে ম্লান করতে না পারে

দীপক চৌধুরী: দেশে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় দুর্নীতি আর আমলাতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেদিন জাতীয় সংসদে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেখতে বলেছেন। দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষকে ঘর দেওয়ার বিষয়ে তাঁর পদক্ষেপ সারাবিশে^ প্রশংসিত। শুধু ঘর দেওয়াই নয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যার নজর ও অন্যায়ের প্রতি কঠোরতা অবশ্যই মানুষকে আস্থা দিয়ে থাকে। সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’র অঙ্গীকার দৃঢ়ভাবে পালিত হোক এটা জনগণ চাইছে। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি নানা ছুঁতোয় যেসব অপকর্ম ও অনিয়ম করে চলছে সময় থাকতে এদের কঠোর ভাবে দমন করা জরুরি। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বের করে দেওয়া দরকার। সুশাসন নিশ্চিত করতে তাদের প্রশাসনে রাখার তদ্বির বন্ধ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম নিয়ে কিছু দিন ধরে সরগরম আলোচনা চলছে। বিশেষ করে বরিশালে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার অবস্থান নিয়ে এর সূত্রপাত। যারা মোটামুটি দেশের খবরাখবর রাখেন তাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ জানা। আসলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ বিষয়টি অবশ্যই একে অপরের পরিপূরক হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে দেখা গেল, তারা সাংঘর্ষিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এবার অন্যদিকে আসি। দুর্নীতি সমাজের একটি ভয়াবহ ব্যাধি।

কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা এখনো নানা সেক্টরে নানাভাবে, নানা পরিচয়ে, নানা কৌশলে বহাল তবিয়তে আছে, খোলস পাল্টে আছে। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে আমরা দুর্নীতির ক্ষেত্রে ছাড় না দেওয়ার পদক্ষেপ দেখছি। এটা খুবই ভালো দিক। ‘দুর্নীতিবাজ’ ব্যক্তি যত প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর ও সরকারী দলের নেতা-মন্ত্রীর আত্মীয় হোক না কেন! এক্ষেত্রে দুদক ভালো ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গণমাধ্যমে দেখলাম, অবশেষে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের প্রতারণার মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে অন্তর্ভুক্ত করেই অভিযোগপত্র তৈরি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক সাংবাদিকদের জানান, শিগগির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।

কে দোষী বা কে দোষী নয় এটি নির্ধারণ করবেন আদালত। তখন মানুষ বিবেকের মাধ্যমে বিচার করার সুযোগ পাবে। এদেশের জনগণ তা-ই চায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক আবদুল মালেকের কথা ভুলবার নয়। একজন ড্রাইভারের কী পরিমান ক্ষমতাধর হতে পারে ও কতটা বিত্তশালী হতে পারেন তা নিয়ে বহুবার লেখা ও বলা হয়েছে। অবশেষে মালেককে গত সোমবার আদালতে তোলা হয়। এরপর তাকে জেলে পাঠানো হয়।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক মো. আবদুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে আবদুল মালেক ও স্ত্রী নার্গিসের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এর সাত মাসের মাথায় অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করল দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আবদুল মালেক দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। তিনি তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ১ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রেখেছেন। মালেকের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪–এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। অপর মামলায় মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমকে আসামি করা হয়। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ভোগদখলে রাখায় পরস্পরকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন।

সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিরই আমজাদ হোসেনসহ ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। বেবিচকের দুই প্রকৌশলীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ( বেবিচক) দুই প্রকৌশলীর অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তিন প্রকৌশলীসহ তাঁদের স্ত্রী, নির্ভরশীলদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে কমিশন। পত্রিকায় দেখলাম, এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন দুজনকে পৃথক নোটিশ পাঠান। তারা হলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (কুর্মিটোলা) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাকসুদুল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া (সিভিল অ্যাভিয়েশন-২)।

(এলজিইডি)তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মজিবুর রহমান সিকদার ও তার স্ত্রী কামরুন নাহারের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের পরিচালক এস এম মাসুদুল হক এই নোটিশটি জারি করেন। দুদক সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে/ বেনামে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের স্বনামে/ বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী দাখিল করতে হবে। সরকারের কঠিন কিছু উদ্যোগে মানুষ ভরসা পাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ ডিআইজি, কারাকর্মকর্তা ডিআইজি, ঢাকার সূত্রাপুরের কেসিনো ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের এনু-রুপম জেলে। তবে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও কর্মকর্তা-কর্মচারি স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশয়ে রয়েছে। অপকর্ম করেও তারা ‘বুক ফুলিয়ে’ কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পরিচয়ও দিচ্ছে। দল ও সরকারের স্বার্থেই এদের চিহ্নিত করা জরুরি।

তবে এটা সত্য অতীতে জাপা, বিএনপি-জামায়াতের সরকারগুলোর লোকেরা সীমাহীন দুর্নীতি করেও পার পেয়েছিল। এদের ডালপালা ছিল দুর্নীতিতে ঠাসা। প্রশাসন ছিল নির্বাক। আর এখন সমালোচকরাও স্বীকার করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কারণে দুর্নীবাজদের এখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জেল খাটছে, বিচার চলছে, দুদক সক্রিয়। এই রীতি-পদ্ধতি দীর্ঘদিন এদেশে ছিল না। এখন অন্যায়কারী ধরা পড়লে তিনি যতো উচ্চতম ব্যক্তি বা সমাজের যেকোনো স্ট্যাটাসেরই হোন না কেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার আমলে নিজ দলের (সাবেক) মন্ত্রী, এমপি, নেতা, জনপ্রতিনিধি, নামিদামি ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী কর্মকর্তাও জেলে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কারণেই আজ টেকসই উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। মোট চারবারের প্রধানমন্ত্রী তিনি। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বারো বছর ধরে দুঃসাহসী নেতৃত্ব দিয়ে দেশের জনগণকে যেমন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছেন ঠিক তেমনি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এক বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। রাজনীতির কঠিন ময়দানে জাতির জনকের এই কন্যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়