জাফর ওয়াজেদ: জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ও সুইস কুটনীতিক ড. ভিক্টর এইচ উমব্রিখ্ট ব্যাংককে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে ১৭ নভেম্বর ৭৫ এ এক চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠির উল্লেখযোগ্য অংশের উদ্ধৃতি ব্যাংককের মার্কিন রাষ্ট্রদূত শেল্ডন হোয়াইটহাউজ পরদিন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠান।
হোয়াইটহাউজ লিখেছিলেন, ৩ নভেম্বর আমি ঢাকা থেকে ফিরি। তিনি লিখেছেন, ‘সত্য বলতে কী বাংলাদেশের রাজনীতিক ও সামরিক বাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও মতবিরোধ ছিলো। তাদের অনেকেই মুজিব ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিষয়ে ঘাতক মেজরদের সাথে নেই। তাঁরা ঘাতকদের ক্রিমিনাল হিসাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করবার চেষ্টা করছেন। আমি ওই দেশ হতে কলকাতা হয়ে ইউরোপে চলে আসি’।
জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ড. উমব্রিখ্ট মুজিব সরকারের সাফল্যের একটি চিত্র ও উল্লেখযোগ্য অংশের বিবরণ দেন। তিনি লিখেছেন, ‘গত ১২ মাস ( এক বছর) ধরে দেশের অর্থনীতির বিরাট উন্নতি ঘটেছিলো। ভালো খাদ্য পরিস্থিতি, বৃহত্তর খাদ্য মজুত, ব্যাপক রপ্তানি ও ঘাটতিবিহীন বাজেটও ছিলো। ধর্মঘট ছিলো না, জনহিতকর কর্মসূচি ছিলো, কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্প, কম বেকারত্ব, অধিকতর দক্ষ জনপ্রশাসন প্রভৃতি। কিন্তু এতদ্বসত্তেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তম অংশটিকে কেন নির্মূল করা হলো তা বোধগম্য নয়। আমাদের তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই খুনি মেজরদের যেন আশ্রয় না দেয় সেটা জানিয়ে বলেন, ‘এই সামরিক ব্যক্তিরা বড় রকমের দুর্বৃত্ত তারা কেবল শেখকেই হত্যা করেনি, তারা তাঁর স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে খুন করেছে। তারা হত্যা করে শেখের দুই বিবাহিত পুত্রকে, সঙ্গে তাদের তরুণী স্ত্রীদেরও ( যাদের একজনের বিয়ের বয়স হয়েছিল ১৫ মাস, অন্য জনের ৩ সপ্তাহ) হত্যা করে। তারা শেখের ১১ বছরের কনিষ্ঠ পুত্রকে বাগানে ধাওয়া করে এবং গুলি করে হত্যা করে’।
ড. উমব্রিখ্ট লেখেন, এই চরম নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার সবটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই দুর্বৃত্তদের দেশে ফেরত পাঠানো উচিত এবং একটি সামরিক আদালতে তাদের বিচার হওয়া উচিত, এদের যুক্তরাষ্ট্রে ঠাঁই হতে পারে না’। উল্লেখ্য ওই সময় খুনিরা ব্যাংককে অবস্থান করছিলো । লেখক : মহাপরিচালক, পিআইবি।