সেলিম রেজা নূর: আমাদের পিতা দৈনিক ইত্তেফাকে তার কালজয়ী কলাম ‘মঞ্চে নেপথ্যে’র এই পর্বে আইয়ুব-শাহীর তীব্র সমালোচনা করেন।
‘‘পাকিস্তানের মানুষের সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা ছিল না,সমগ্র জাতি তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িল। দেশের ‘ত্রাণকর্তার’মুখোশ পরিয়া জনগণের অধিকার হরণকারী আইয়ুব সেদিন গণ-সংযোগের নামে দেশের উভয় অঞ্চল সফর করিলেন। ‘হুজুগে পাগলের’মতো দেশের একশ্রেণীর সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবী ‘হুজুরের’সেবায় জানপ্রাণ নেছার করিয়া তাঁর জয়ঢাক পিটাইতে শুরু করিলেন। সময়কালে কুচক্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত উদ্ভট খেয়ালও জাতির উপর চাপাইয়া দেওয়া হইল। শুরু হইল ‘মৌলিক গণতন্ত্রের’যুগ। লজ্জায় মাথা হেঁট করিয়া জাতি দেখিল,দেশের গোটা বুদ্ধিজীবী মহলটাই যেন আত্মবিক্রয় করিয়া বসিয়াছে। যাঁহাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও সাধনার বলে পাকিস্তান দুনিয়ার মানচিত্রে স্থান পাইয়াছিল,সেই দেশবরেণ্য নেতৃবৃন্দকে যিনি ‘এবডো’করিয়া রাজনীতি হইতে নির্বাসন দিলেন, হাজার হাজার নেতা ও কর্মীকে কারাগারে আটক করিয়া কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াফত করিলেন,অসংখ্য পরিবারকে রিক্ত নিসম্বল করিয়া পথের কাঙ্গালে পরিণত করিলেন, সেই বিবেকহীন ক্ষমতালোভী মানুষটির লালসার অগ্নিতে কাষ্ঠ জোগাইয়া এদেশের একশ্রেণীর মানুষ সেদিন নিজেদের ভাগ্য গড়িল আর অত্যাচার নির্যাতনের স্টিম রোলারের নিচে চাপা পড়িয়া সমগ্র জাতি গুমরিয়া মরিতে লাগিল! যেমন সামরিক শাসন যুগে, তেমিন ৬২-র শাসনতন্ত্রের যুগে ‘প্রভু’র পাশে ‘সেবাদাসের’ও অভাব হইল না। চরিত্র বিনষ্ট করিয়া জাগ্রত জাতিকে এমন করিয়া পঙ্গু করার চেষ্টার দ্বিতীয় নজির আর কোথাও আছে কিনা জানি না।’’
আপনার মতামত লিখুন :