শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৮:১৬ রাত
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৮:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] রংপুর বন্যা কবলিত অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯১ বিদ্যালয়ে পাঠদানে শঙ্কা

আফরোজা সরকার: [২] করোনা সংকটে একাধিকবার বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েও সরে এসেছে সরকার। এবার ১২ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে খুলছে বিদ্যালয়। এজন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষকরা। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছে বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি। দীর্ঘ দেড়বছর পর চার দেয়াল ভেদ করে প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে পা পড়বে শিক্ষার্থীদের। তবে কয়েক দফার বন্যায় চরাঞ্চলের কিছু ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

[৩] এবার রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক স্তরের এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, পাঠদান নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। রোববারের আগেই স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষ পাঠদান উপযোগি করে তোলা হবে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে।

[৪] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলাঞ্চলে এখনও বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠ ও মাঠের বাইরে এখনও পানি জমে আছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও রয়েছে কর্দম। কোথাও কোথাও বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যালয়ের আসবাব থেকে অবকাঠামো। বিদ্যালয়ের মেঝেতে গর্ত, চরাঞ্চলের শিটশেড বিদ্যালয়গুলোর বেড়া নষ্ট। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বসার চেয়ার ও টেবিল নষ্ট হয়েছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে।

[৫] রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এ বছর বিভাগের পাঁচ জেলায় বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ১০২টি, কুড়িগ্রামে ৭৩টি, নীলফামারীতে ১০টি, লালমনিরহাটে ৫টি এবং রংপুরে একটি রয়েছে। এ ছাড়া গদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও চার বিদ্যালয়।

[৬] এসব বিদ্যালয় মাঠে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় অভিভাবকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব বিদ্যালয় পরিদর্শনও করেছেন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে নয়তো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

[৭] লালমনিরহাট সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় কবলিত হাতীবান্ধা উপজেলার পাঁচটি বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলো-পূর্ব ডাউয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ডাউয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সির্ন্দুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

[৮] তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর মাঠ, অবকাঠামোর টিনশেড, মেঝে, দেয়াল, নলকূপ, টয়লেটসহ বেশ কিছু আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।

[৯] হাতিবান্ধার সির্ন্দুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ফুয়াদ ইসলামের বাবা ফরিদুল মিয়া। তিনি পেশায় দিনমজুর। পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খোলার খবরে খুশি হলেও ছেলেকে বিদ্যালয় পাঠানো সম্ভব হবে কিনা, এর উত্তর জানা নেই তার।

[১০] মুঠোফোনে ইউমেনআইকে ফরিদুল মিয়া বলেন, ‘ছাওয়া স্কুলোত যাউক এটাতো হামরা চাই। কিন্তুক স্কুলের মাঠোত পানি জমি আছে, কাদোমাটিতে একাকার। রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেশি ভালো না। মেলাদিন পর স্কুল খুলোছে, এ্যালা ছাওয়াক স্কুলোত পাঠাও মুশকিল।’

[১১] নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, এবারের বন্যায় জলঢাকা, ডিমলা, ডোমার, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৪টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে দশটির অবস্থা কিছুটা নাজুক। তবে সরকারের নানা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি থাকায় রোববার থেকে পাঠদান করা সম্ভব হবে।

[১২] তিনি আরও জানান, ডিমলার পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে বেড়িবাঁধের উপর অস্থায়ী শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী সপ্রাবি, কিসামত ছাতনাই (২য় পর্যায়) সপ্রাবি, জলঢাকার পথকলি শিশু নিকেতন, উত্তর বগুলাগাড়ী, পশ্চিম বগুলাগাড়ী, উত্তর চেরেঙ্গা মাঝাপাড়া, আইডিয়াল কলেজপাড়া,  শৌলমারী, মৌজা শৌলমারী আলসিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রোববার থেকে চালু করা সম্ভব হবে।

[১৩] গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী বলেন, ‌‘বন্যা কবলিত গাইবান্ধায় ক্ষতির তালিকায় থাকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ১০২টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছিল তা নেমে গেছে। এখন সরকারি নির্দেশনা মেনে ধুয়ে মুছে সবকিছু পরিষ্কার করে পাঠদানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’

[১৪] এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে না পারলে সরকারের এই পদক্ষেপ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি  ইউমেনআইকে, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। এখন ঘরবন্দি লাখো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাবার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। তবে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বাইরে রাখলে সরকারের এই উদ্যোগ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

[১৫] তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। বিদ্যালয় খুলতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় অভিভাবকরাও বেশ আগ্রহী বলে জানান রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুজাহিদুল ইসলাম।

[১৬] প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় এই কর্মকর্তা  ইউমেনআইকে জানান, ‌‌রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে মেরামত করা হচ্ছে। রোববারের মধ্যে পাঠদানের উপযোগী করা হয়েছে। যে কয়টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, সেগুলো পাশের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আপাতত চালু হবে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মিললে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়