শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০১:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আকতার বানু আলপনা: শিশু ও শ্বাশুড়ী সমাচার

আকতার বানু আলপনা : শিশুরা প্রথম শব্দ শেখে ‘মা’। কারণ মাকে তার সবচেয়ে বেশি দরকার। আর মায়ের পরেই তার দরকার হয় পানি। তাই ‘মা’ থেকে একটু বাড়িয়ে সে পানিকে ‘মাম’ বলে। এজন্যই প্রায় সব বাচ্চারা পানিকে ‘মাম’ বলে। [১] বাচ্চারা এমন ব্যক্তি বা বস্তুকে বেশি গুরুত্ব দেয় যারা তাদের প্রয়োজন মেটায় বা যারা ভালোবাসে। শিশুরা বাইরে ঘুরতে চায়। কিন্তু একা যেতে পারে না। তাই যারা শিশুকে বেশি বাইরে নিয়ে যায়, শিশুরা তাদের কোলে বেশি যায় বা যেতে চায়। যে চকলেট বা খেলনা দেয় বা আদর করে, বাচ্চারা তাকে বেশি পছন্দ করে। আমার বড় মেয়ের বয়স তখন দুই বছর। সে কলম ধরতে পারে। হাবিজাবি দাগ টানতে পারে।

একদিন খাটে বসে সে ছবি আঁকছে। আমি দেখলাম, সে একটা গোল গোল বৃত্ত আঁকছে। দাগের ওপর দাগ, দাগের উপর দাগ। আঁকা শেষ করে সে আমাকে বললো, ‘আম্মু দ্যাখ, আমি কি সুন্দর একটা পটিপট আঁকলাম’ আমি দেখে স্তম্ভিত হয়ে বললাম, ‘ও আচ্ছা, তাই নাকি? আমি তো ভাবলাম ওটা একটা বল’। মেয়ের কথা শুনে আমার শ^াশুড়ী হা হা করে হাসতে লাগলেন। আমি ভাবতে লাগলাম, এতোকিছু থাকতে আমার মেয়ে পটিপট আঁকলো কেন? কারণ বাচ্চাদের কাজকর্ম নির্ভর করে তার প্রয়োজনের গুরুত্বের ওপর। বাচ্চাদের কাছে পটিপট খুবই জরুরি একটা জিনিস। ওটা ছাড়া তাদের চলে না। তাই ছবি আঁকতে গিয়ে সে তার প্রয়োজনীয় জিনসটাই এঁকেছে। আমার মেয়েরও পটিপট ছাড়া চলে না। একবার আমি শ্বশুরবাড়ি গেছি। সে কিছুতেই পট ছাড়া টয়লেটে বসবে না। কী বিপদ! তাই দোকান থেকে তড়িঘড়ি করে পট কিনে আনতে বাধ্য হলাম। [২] বাচ্চাদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, যে জিনিসটা তাদের পছন্দ, কোনো কারণে সেটা না পেলে তারা খুব বিরক্ত হয়, রাগ করে। নতুন পট কিনে এনেও আরেক বিপদ হলো। নতুন পট মেয়ের পছন্দ হল না। কারণ নতুন পট তার আগের পটের মতো নয় ‘দোকানে আগের ডিজাইন ছিলো না’। তাই সে নতুনটাতেও বসবে না। মহা বিপদ। শেষে অনেক হাতে পায়ে ধরে একরকম জোর করে তাকে নতুন পটে বসানো হলো

[৩] শিশুদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাদের পরিচিত পরিবেশে কোনো পরিবর্তন পছন্দ করে না, ভয় পায় বা বিরক্ত হয়। সেজন্যই অপরিচিত কারও কোলে তারা যেতে চায় না। আমার ছোট মেয়ের জন্মের তিনদিন পর থেকেই সে সারারাত কাঁদে। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে ভোরবেলা ঘুমিয়ে যায়। ডাক্তার দেখাই, ওষুধ খাওয়াই। কোনো লাভ হয় না। টানা তিনমাস আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। সারারাত বাচ্চা কোলে নিয়ে হাঁটি। মশারী টানালে তাই দেখে মেয়ে ভয় পায় ‘কারণ মশারী টানালে ঘরের পরিবেশ পাল্টে যায়’। তখন আরও বেশি কাঁদে। তাই মশারী খুলে দিয়ে ঘরের ভেতরে, কখনও বারান্দায় মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটি। যখন আর পারি না, তখন আম্মার কোলে দেই। সমানে মশা কামড়ায়। মহাবিপদ। আমার বর বিদেশ থেকে এলো মেয়েকে দেখতে। সেবার দেড় মাস ছিলো। পুরা দেড় মাসই সেও আমার সঙ্গে সারারাত মেয়েকে নিয়ে জেগে থেকেছে। ভোরবেলা মেয়ে ঘুমানোর পর সে ঘুমিয়েছে। তখন শ্বশুরবাড়ি গেলে গোটা বাড়ির মানুষ বাচ্চার কান্নায় ঘুমাতে পারতো না। তিনমাস বয়সে মেয়েকে নিয়ে আমি নানার বাড়ি গেলাম।

যে ঘরে শুতে গেলাম, সে ঘরের দেয়ালের ক্যালেন্ডারে একটা মেয়ের ছবি ছিলো। সে ছবি দেখে মেয়ে ভয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি ক্যালেন্ডারটা বারান্দার এককোণে সরিয়ে রাখলাম। তখন মেয়ের কান্না থামলো। মেয়ের ভয় পাবার কারণ হলো, তার ঘর বদলে গেছে। আমার ঘরে আমাদের বিয়ের যে ছবি ছিলো, ক্যালেন্ডারের ছবিটা তারচেয়ে আলাদা। সকালবেলা বারান্দায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা গুটানো ক্যালেন্ডারটা দেখেও চিনতে পেরে ভয়ার্ত চোখে সেটার দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি ক্যালেন্ডারটা ফেলে দিলাম।[৪] শিশুরা মায়ের গায়ের গন্ধ পায়। ওরা মায়ের অনুপস্থিতি বুঝতে পারে। তখন ভয় পেয়ে কাঁদে। কারণ শিশুরা কথা বলার আগ পর্যন্ত তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য হাসি ও কান্না - এ দুটি আবেগকে ব্যবহার করে। আমার বড় মেয়ে প্রথম কিছুদিন আমার কোলে ঘুমাতো। বিছানায় শোওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠে কাঁদতো। একটু নড়লেই ঘুম ভেঙ্গে যেত। কখনও কখনও বিছানায় ঘুমিয়ে রেখে আমি পাশের ঘরে গেলেই জেগে উঠে কাঁদতো। আমি পাশে থাকলে টানা দু তিন ঘণ্টা ঘুমাতো। শিশুদের মতোই মানুষের আচরণও প্রয়োজন নির্ভর। কারও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ আর তাকে গুরুত্ব দেয় না বা ভুলে যায়। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী জাইগারনিকের (তবরমধৎহরশ, ১৯২৭) একটি গবেষণা আছে রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের উপরে। কিছু ওয়েটারকে খাবারের বিল পরিশোধ করেছেন এবং এখনও খাবারের বিল পরিশোধ করেননি, এমন কিছু কাস্টমারদের খাবারের মেনু ও দাম মনে করতে বলা হয়। দেখা যায়, অধিকাংশ ওয়েটার যারা বিল পরিশোধ করেননি তাদের মেনু ও দাম সঠিকভাবে বলতে পারে, কিন্তু যারা খাবারের বিল পরিশোধ করেছেন, তাদেরটা ঠিকমত বলতে পারে না। তার মানে, কারও কাছে কোন পাওনা, প্রত্যাশা বা লাভের সম্ভাবনা থাকলে আমরা সে মানুষদের মনে রাখি, পছন্দ করি, ত্যাগ করি না। কিন্তু কোনোকিছু পাওয়ার বা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে আমরা সেসব মানুষকে ত্যাগ করি। তার প্রমাণও আছে ভুরি

ভুরি। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর বা পরকীয়ায় জড়ানোর পর প্রথম বউয়ের প্রতি স্বামীর আর কোনো আগ্রহ থাকে না ‘স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ালেও তাই’। শারীরিক সম্পর্ক করার পর অধিকাংশ প্রেমিকরা প্রেমিকাকে ত্যাগ করে। বাবা-মার সম্পত্তি পেয়ে গেলে অনেক কু-সন্তান বৃদ্ধ বাবামার দেকভাল করে না বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। বলা হয়, পৃথিবীতে একমাত্র মা কোনো স্বার্থ বা কোনোকিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই আজীবন সন্তানকে ভালোবাসে। মাঝে মাঝে কথাটা আমার বিশ্বাস হয় না। কদিন আগে একটি মেয়ে আমাকে জানালো, সে শাশুড়ীর দূর্ব্যবহারে এতোটাই মানসিক কষ্টে আছে যে, মাঝে মাঝে তার স্বামীকে ছাড়তে, এমনকি আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে। শাশুড়ি বৌয়ের বিরুদ্ধে ছেলেকে নানা কথা লাগায়। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ, অশান্তি লেগেই থাকে। অথচ শাশুড়ি যখন মেয়ের বাড়ি, গ্রামের বাড়ি বা কোথাও বেড়াতে যায়, তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো কলহ হয় না। তারা মহাসুখে থাকে। আমার কথা হলো, মা ছেলেকে সত্যিই ভালোবাসলে ছেলে অসুখী হতে পারে, এমন কোনো কাজ করতেই পারতো না। তাই সবার উচিত, নিজে ভালো থাকা এবং আশেপাশেরদেরকেও ভালো থাকতে দেওয়া। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়