নিউজ ডেস্ক: এবার ই-কমার্স কম্পানি ধামাকা শপিং ডটকমের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯৬ টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে সরিয়ে নেওয়ার তথ্য পেয়েছেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানকারীরা। কয়েক মাস অনুসন্ধান শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জন পরিচালকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে সিআইডি। তদন্তকারী সূত্র জানায়, কয়েক মাসেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৮০৩ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৬৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে টাকা সরানোর তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের ডাবল ভাউচার, সিগনেচার কার্ড ও বিগ বিলিয়ন রিটার্নস এবং অস্বাভাবিক মূল্যছাড়ের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু হলে সিআইডির নোটিশে হাজির না হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসিমউদ্দিন চিশতী। অন্য পরিচালকরাও যথাযথ তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রাহকদের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। সূত্র বলছে, মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসবে। কালের কণ্ঠ
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পর ই-অরেঞ্জ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ এখন আলোচনার তুঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির অলিখিত মালিক বরখাস্ত করা পুলিশের পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা পালাতে গিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। দেশের জেলে আছেন তাঁর বোন সোনিয়া মেহজাবিনসহ চারজন।
গতকাল সন্ধ্যায় বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জানান, সিআইডির পক্ষ থেকে ধামাকা শপিং কম্পানির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলা হয়েছে।
জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ১১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন ধামাকার এমডি জসিমউদ্দিন চিশতী, পরিচালক (জসিমের স্ত্রী) সাইদা রোকসানা খানম, তাঁদের ছেলে ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তাসফির রেদোয়ান চিশতী, আরেক ছেলে ও পরিচালক মাসফিক রেদোয়ান চিশতী, পরিচালক নাজিমউদ্দিন আসিফ ও সাফওয়ান আহমেদ।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের অক্টোবরে চালুর পর কয়েক মাসেই ধামাকা গ্রাহকদের ডাবল ভাউচার, সিগনেচার কার্ড ও বিগ বিলিয়ন রিটার্নস এবং অস্বাভাবিক মূল্য ছাড়ের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছে। জসিমউদ্দিন ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড চালানোর জন্য ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে ডেভেলপমেন্ট সফটওয়্যার, টেলিকম সিস্টেমস, স্মার্টফোন, আইপি ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, কমিউনিকেশন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার নামে নিবন্ধন নেন। আত্মসাৎ করার জন্য ‘ধামাকা শপিং’ নামে অবৈধভাবে ই-কমার্স ব্যবসা চালু করেন তিনি। গত ১ অক্টোবর থেকে এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয় ধামাকা। অন্যদিকে ৬০০ সরবরাহকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনার নামে ২০০ কোটি টাকার পণ্য গ্রহণ করে দাম পরিশোধ না করেও প্রতারণা করে ধামাকা। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা পরস্পর যোগসাজশে তাঁদের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড, মাইক্রো ট্রেড ও মাইক্রো ট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজে লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবগুলোতে ১১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯৬ টাকা স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।
সূত্র জানায়, ধামাকার সংশ্লিষ্ট ১৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে এমডি জসিমউদ্দিনের পাঁচটি, ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের সাতটি, মাইক্রো ট্রেডের একটি ও মাইক্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জসিমউদ্দিনকে কয়েকবার নোটিশ দিয়ে ডাকা হলেও ‘করোনার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না’ জানিয়ে এড়িয়ে গেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লেনদেনের বাপারে সন্তোষজনক প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
অর্থপাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে ধামাকা শপিং ডটকমের মুখ্য পরিচালনা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম রানা এর আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং হিসাবরক্ষণ ও আর্থিক বিভাগের প্রধান এ ব্যাপারে জানাতে পারবেন।’
আপনার মতামত লিখুন :