অর্থনীতি ডেস্ক: [২] বাংলাদেশে যখন ইট-পাথরের দৌরাত্ম্যে বাঁশের বেড়ার ঘর বিলুপ্তির পথে, তখন বিদেশে বাড়ছে বাঁশের বেড়া আর ছন দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পরিবেশবান্ধব ঘরের চাহিদা। শুধু তাই নয়, গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য মাটির সানকিও জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশিদের কাছে।
[৩] এ চাহিদার সুযোগে এবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ঝুড়িতে যোগ হল নতুন পণ্য বাঁশের বেড়া আর মাটির সানকি। আর এসব ঘরের ছাদ হিসেবে পাহাড়ি ছনও (বড় ধরনের ঘাস) রপ্তানি হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে এ ধরনের পণ্যের বড় চালান গেল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে।
[৪] চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নাছির উদ্দিন জানান, কুয়েতের এক আমদানিকারক বাংলাদেশ থেকে বাঁশের তৈরি বেড়া-ছাটাই, পাটি ও মাটির তৈরি সানকি নিয়ে গেছেন।
[৫] গত ৩০ এপ্রিল এ চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পাঠানো হয়েছে। চালানটি রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের নাফস ইন্টারন্যাশনাল। আর বাংলাদেশ থেকে এ পণ্য আমদানি করেছে কুয়েতের কল্লোল জেনারেল ট্রেডিং।
[৬] তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাঠানো এই পণ্যের কনটেইনারের ওজন ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কেজি। যেখানে মোট প্যাকেট ছিল ৪৪৫টি।
[৭] রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাফস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার তনয় বড়ুয়া বলেন, আমরা বাঁশের বেড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করেছি। এছাড়াও আমাদের কিছু সাপ্লাইয়ার আছে যারা আমাদেরকে এগুলো তৈরি করে দেন।
[৮] তিনি বলেন, বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে মরুভূমিতে ঘর তৈরি করেন কুয়েতিরা। কুয়েতের মরুভূমিতে বাঁশ ও ছনের ঘর তৈরি করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেন তারা। আর খাবার পরিবেশনের জন্য দেওয়া হয় মাটির সানকি।
[৯] তনয় বড়ুয়া বলেন, আমরা বাঁশের তৈরি বেড়াই শুধু নয়, সঙ্গে পাহাড়ে তৈরি ছনও পাঠাই কুয়েতে। এসব বেড়া মুলি বাঁশের তৈরি।
[১০] চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নাছির উদ্দিন বলেন, বাঁশের তৈরি নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এর চাহিদা বেশি। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাঁশ-বেতের পণ্য পাঠাতে পারলে আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো।
[১১] আমাদের দেশে প্রচুর বাঁশ এবং বেত উৎপাদন হয়। প্রয়োজনে এর চাষ আরও বাড়ানো যায়। তাছাড়া এসব পণ্য চাইলে নারীরাও তৈরি করতে পারে। এতে নারীদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
[১২] উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের রোগতত্ত্ববিদ ছৈয়দ মুনিরুল হক বলেন, বাঁশে যাতে কোনো ধরনের পোকামাকড়জনিত রোগবালাই না থাকে, সে ধরনের বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করতে হয়। রোগবালাই থাকলে সেগুলো বিদেশের কোনো বন্দর দিয়েই ছাড় দেবে না। তাই রোগবালাইমুক্ত বাঁশ নির্বাচন করেই এসব শৌখিন ও ব্যবহার্য পণ্য তৈরি করতে হবে। যে কোনো দেশের ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করেই এ পণ্য বিদেশে পাঠানো যাবে।
[১৩] রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সিএন্ডএফ প্রতিনিধি দুর্জয় বড়ুয়া বাপ্পা বলেন, বিদেশে এসব পণ্যের প্রচারণাও দরকার। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
[১৪] মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে পরিবেশবান্ধব এসব ঘর ও পণ্য জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এজন্য বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক মেলায় অংশ নেওয়া ছাড়াও সুযোগ পেলে এসব পণ্য তুলে ধরার দাবি জানান তিনি। সূত্র : চট্টগ্রাম প্রতিদিন, বার্তা২৪। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত, সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও