শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট, ২০২১, ০৪:৫৪ সকাল
আপডেট : ৩১ আগস্ট, ২০২১, ০৬:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যে পানির লড়াই তীব্র হয়ে উঠছে

নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠেছিল দজলা ও ফোরাত (টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস) নদীর তীরে। খ্রিস্টপূর্ব তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অব্দে এ দুটি নদীর মধ্যবর্তী উর্বর ভূমি ঘিরেই চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম সভ্যতার একটি। দজলা ও ফোরাতের নদীবাহিত পললভূমি ছিল খুবই উর্বর ও কৃষিকাজের জন্য আদর্শ। অর্ধচন্দ্রাকৃতির উর্বর বিস্তীর্ণ ভূমি তাই পরিচিতি পায় ফার্টাইল ক্রিসেন্ট নামে। বর্তমানে এ দুটি নদীর অবস্থান ইরাকে। বণিক বার্তা

ইরাকের এ উর্বর অর্ধচন্দ্রাকৃতির এলাকায় বর্তমানে পানির জন্য তৈরি হয়েছে হাহাকার। এজন্য উজানে ইরান ও তুরস্কের বাঁধকে দায়ী করা হচ্ছে। ইরাকের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পৃথিবী বিখ্যাত দুটি নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এ এলাকার তাপমাত্রা বাড়ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা নদী ও দেশটির জন্য পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি করেছে।

ফ্রান্সের লায়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক পানি বিশেষজ্ঞ ফ্যাব্রিস ব্যালানশে ইরাকজুড়ে পানি সংকট পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে মনে করেন। দূষণ, অপচয়, প্রবাহ না থাকা, বৃষ্টির অভাব—সবকিছুর প্রভাব একত্রে ভয়াবহ রূপ নেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

উজানে তুরস্ক ও ইরানের বাঁধ দজলা ও ফোরাত নদী ও শাখা নদীর পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে, যা ইরাকের চেয়ে প্রতিবেশী তেহরান ও আঙ্কারাকে শক্তিশালী অবস্থান দিয়েছে।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরাক বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম আল মারাশি বলেন, অতীতে আমরা চিন্তা করতাম পানির জন্য রাষ্ট্র যুদ্ধ করবে। এখন সিরিয়ান বনাম সিরিয়ান কিংবা ইরাকি বনাম ইরাকি সংঘাতের চেয়ে পানি নিয়ে সংঘাত দেশের জন্য আরো বেশি (উদ্বেগের/শঙ্কার) কিছু। সমস্যাসংকুল দেশ ইরাকের সরকার পানি বিষয়ে এখনো নির্বিকার। এখন অনেকের শঙ্কা জলবায়ু পরিবর্তনে উর্বর ক্রিসেন্ট এলাকা রক্ষার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

তিন হাজার কিলোমিটারের ইউফ্রেটিস ও ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টাইগ্রিসের উত্পত্তি হয়েছে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে। নদী দুটি বয়ে গেছে কয়েকটি দেশের মধ্যে দিয়ে। এগুলো হলো তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাক। তবে মূল অংশ ইরাকেই। টাইগ্রিস নদী শুধু সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত স্পর্শ করেছে। এছাড়া ইরাকে প্রবাহিত বেশ কয়েকটি পানির উৎস হলো ইরান। আঞ্চলিক পানি বিশেষজ্ঞ ফ্যাব্রিস ব্যালানশে জানান, ইরাকের পানির ৯০ ভাগের বেশি আসে বাইরে থেকে।

নব্বইয়ের দশকে তুরস্ক গ্যাপ প্রকল্পের আওতায় ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিসের ওপরে বেশ কয়েকটি বাঁধ তৈরি করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোট ২২টি বাঁধের মধ্যে ১৬টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে গ্যাপ প্রকল্পের পানিতে তুরস্কের কৃষিজমির পরিমাণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। প্রকল্পের হিসাবে তুলাসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদনও বাড়বে।

একইভাবে সিরিয়া ইউফ্রেটিস নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃষিকাজ এবং সুপেয় পানির জন্য তাকবা ও টিশরিন ব্যারেজে পানি সরবরাহ করছে।

১৯৮৭ সালে ইউফ্রেটিস নদী দিয়ে সিরিয়াকে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ কিউবিক মিটার পানি সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছিল তুরস্ক। পরবর্তী সময়ে সিরিয়া ৫৮ ভাগ পানি ইরাককে দিতে সম্মত হয়।

একইভাবে টাইগ্রিস ও তার শাখা নদীগুলো ইরান থেকে ইরাকে পানি সরবরাহ করে। এর পরিমাণ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। তাই পানির প্রাচুর্য বহু বছর ধরে ইরাককে এ এলাকার পানিসমৃদ্ধ দেশ বানিয়েছে।

আগের দশকে যখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হতো, তখন কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মারাত্মক সমস্যা তৈরি করেছে বলে মনে করেন ফ্যাব্রিস ব্যালানশে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বিজ্ঞানীরা আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

২০১২ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত হিসাবে আগের দুই দশকের তুলনায় ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর পানিপ্রবাহ ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ২০৪০ থেকে পঞ্চাশের দশকে ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা করেন লায়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক পানি বিশেষজ্ঞ ফ্যাব্রিস ব্যালানশে। পানিপ্রবাহের এ প্রক্রিয়াও আর কাজ করবে না, যখন অব্যাহতভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে। পানির চাহিদাও বাড়ছে।

শুধু সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই আরো পানি ধরে রাখতে সিরওয়ান নদীতে ১৬টি বাঁধ নির্মাণ করেছে ইরান। দেশটির পানি মন্ত্রণালয় ১০৯টি বাঁধের পরিকল্পনা করেছে, যার অধিকাংশই ইরান থেকে ইরাকে প্রবাহিত।

একই সঙ্গে ইরাকে বিপুল পরিমাণ পানির অপচয় ঘটে। দক্ষিণ এলাকায় ক্ষেতে জমে থাকা লবণ দূর করতে চাষাবাদের পর জমি পানি দিয়ে ধুতে হয়। এতে অনেক পানির অপচয় হয়। এ জমি বিধৌত পানি নদীতে মিশে নদীর পানি লবণাক্ততা বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পানি দূষণ। কারণ ইরাকের অনেক এলাকায়ই সুয়ারেজ সিস্টেম হয় অপ্রতুল নয়তো ধ্বংসপ্রাপ্ত। অনেক এলাকায় নদীর পানি এতটাই দূষিত যে তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত।

ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিসের উজানে বাঁধ পরিচালনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরাক বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম আল মারাশি বলেন, পানির মালিকানার অধিকার নিয়ে আঙ্কারা মোটেই শঙ্কিত নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়