আকতার বানু আলপনা: একটা কমন কথা প্রায়ই শুনি। সেটা হলো- মেয়েরাই নাকি মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু। কথাটা যে সত্যি, তার প্রমাণও আছে ভুরি ভুরি। যৌতুকের জন্য বা নানা কারণে বাড়ির বৌকে তার স্বামী-শ্বশুরের চেয়ে তার শ্বাশুড়ি-ননদরা বেশি নির্যাতন করে। এক জা আরেক জাকে হিংসা করে। এক মেয়ে আরেক মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, বিপদে ফেলে বা কষ্ট দেয়। এমনকি, মা (যে কিনা একজন মেয়ে হয়েও) তার মেয়ের চেয়ে ছেলেকে সবকিছু (ভালো খাবার, কাপড়, জিনিস, টাকা, সম্পদ, ভালোবাসা ইত্যাদি) বেশি দেয়।
বাবুল নামের ছেলেটি যখন তার প্রতিবেশী মেয়েটিকে উলঙ্গ হয়ে রেপ করার হুমকি দিচ্ছিলো, তখন সেখানে বাবুলের মা এবং ভাবী উপস্থিত থেকে তাকে উস্কানি দিচ্ছিলো। প্রশ্ন হলো, কেন একজন মেয়ে আরেকজন মেয়ের শুভাকাক্সক্ষী-সমব্যথী না হয়ে উল্টো তার সঙ্গে শত্রুতা বা বৈরী আচরণ করে? এর কারণ হলো, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক হয়। অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীরা যেহেতু পুরুষের আশ্রয়ে থাকে, সেজন্য পুরুষদের আরাম, সুবিধা ইত্যাদি দেখা এবং সবসময় পুরুষদের খুশি রাখার জন্য নারীরা সদা তৎপর থাকে। পুরুষের উন্নতি বা সুবিধাপ্রাপ্তিকে নারীরা তাদের নিজেদের সুবিধা বলে মনে করে। এজন্য পুরুষকে সুবিধা দিতে প্রয়োজনে তারা কোনো নারীকে নির্যাতন করতে বা পুরুষের সঙ্গে শরীক হয়ে কোনো নারীকে নির্যাতন করতেও নারীদের বিশেষ কোনো আপত্তি হয় না। একটা উদাহরণ দিই।
ধরা যাক, কোনো বরকে মোটরসাইকেল যৌতুক দেবার কথা ছিলো। কিন্তু কোনো কারণে বৌয়ের বাবা তা দিতে পারেনি। তখন স্বামী বৌকে নির্যাতন করবে। পাশাপাশি স্বামীর মা-বোনও বৌকে নির্যাতন করবে। কেন? মোটরসাইকেল কি স্বামীর মা-বোন চালাবে? না। তারা আসলে পুরুষকে সুবিধা পাইয়ে দেবার জন্য নারী হয়েও আরেক নারীকে নির্যাতন করে। তেমনি রেপের হুমকিদাতা বাবুলের অপকর্মে দু’জন নারী শরীক হয়েছে বাবুলকে কোনো সুবিধা পাইয়ে দিতে। এভাবে যখন কোনো পুরুষের বিরুদ্ধে কোনো নারী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলে, তখন ওই পুরুষকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তার স্ত্রী, মা, বোন ইত্যাদি (যারা ওই পুরুষের কাছ থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত) অভিযোগকারী মেয়েটিকেই নানাভাবে হেয় করে, নির্যাতন করে। যেন অভিযোগ করে সে মেয়েটিই একটা বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে। যেন নির্যাতিত হবার দোষ আসলে তারই, পুরুষের নয়। খুব কম নারী পাওয়া যাবে যারা কোনো নারীর পক্ষ নিয়ে কোনো আপনজন পুরুষকে শাস্তি দেবার জন্য এগিয়ে আসবে। এজন্যই বলা হয় নারীর শত্রু নারী নিজেই। ফেসবুক থেকে