কামরুল হাসান মামুন: "'বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র চলছে" আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর স্পষ্ট হয়ে গেছে করোনা নয় বরং সরকার বিরোধী আন্দোলনের ভীতিই হলো স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার পেছনের আসল কারণ। সত্যিইতো স্বাস্থ্য খাতে যেই পরিমান দুর্নীতি হয়েছে, করোনা নিয়ে ভ্যাকসিন কেনাকাটায় যা কিছু ঘটেছে সেগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে আন্দোলনতো হতেই পারতো। যেকোন সময় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মত যেকোন সময় একটা আন্দোলন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া স্কুল কলেজ খোলা থাকলে যদি এক দুই জন শিক্ষার্থীও আক্রান্ত হতো কিংবা মারা যেত আন্দোলনতো হতেই পারতো। কারণ এই দেশে যেকোন ইস্যুকে পুঁজি করে পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের মানুষের অভাব নেই। তাই বলে সরকার নিজে নিরাপদে এবং আরামে থাকার জন্য লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে খেলবে? সারা পৃথিবী জুড়ে সভ্য দেশের সরকারেরা চেষ্টা করে কিভাবে খোলা রাখা যায় আর আমাদের সরকার চেষ্টা করেছে কিভাবে বন্ধ রেখে নিজেরা নিরাপদে থাকা যায়।
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে অন্যতম। অন্যদিকে স্কুল কলেজ বন্ধের দিক থেকে আমরা বিশ্বে তৃতীয়। আমাদের চেয়ে অনেক অনেক খারাপ অবস্থায় থাকা অনেক দেশ তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। করোনার শুরু থেকে প্রায় ১ বছরেরও বেশি সময় ঢাকা চিটাগাং ব্যতীত বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে করোনা তেমন ছিল না বললেই চলে। ওসব জায়গায়তো অন্তত স্কুল কলেজ খোলা রাখা যেত। ভারত, ইংল্যান্ড, ইতালি, আমেরিকা কি করেছে? তারা রেড জোন ব্যতীত বাকি অঞ্চলে স্কুল কলেজ খোলা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমাদের দেশে এই চেষ্টাটাই অনুপস্থিত ছিল এবং এটাই আমাকে সবচেয়ে ব্যথিত করে।
শুধু তাই না! তারপর আবার ছাত্রলীগকে ওয়েল ইকুইপড থাকার আহবান জানিয়েছেন! মুদ্দা কথা হলো আমাদের শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা তাদের বিবেচনায় নেই। যদি থাকতো তা তাদের কাজকর্মে দৃশ্যমান হতো। যদি থাকতো তাহলে বলতে পারতো না তোমরা ওয়েল-ইকুইপড হয়ে থেকো। কার সন্তানদের এই আহবান জানাচ্ছেন? নিজের সন্তানকে ওয়েল ইকুইপড করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানতো। তারাতো অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দেশেই থাকে না।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়