মাসুদ আলম ও সুজন কৈরী: [২] সাভারের আশুলিয়ায় নিজ ঘরে ডিস ব্যবসায়ী ইলিম সরকারকে (৪২) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরকীয়ার জেরে স্ত্রীর যোগসাজশে এলিম সরকারকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পিবিআই। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- এলিম সরকারের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি (৩০) ও তার পরকীয়া প্রেমিক রবিউল করিম পিন্টু (৩৫)।
[৩] বুধবার রাজধানী উত্তরায় নিজ কার্যালয়ে ক্লুলেস এই হত্যা মামলা রহস্য উদঘাটন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই ঢাকা জেলার এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, তদন্ত ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে আশুলিয়া জিরাবো জামগড়া এলাকা থেকে নিহতের স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৪] তিনি আরো বলেন, ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায়। প্রতিদিনের মতো গত ২৭ মার্চ রাত ১০ টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে এলিম সরকার তার স্ত্রী সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকাল ৮টার দিকে এলিম সরকারের স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে জরুরি প্রয়োজনে তার শ্বশুর ফজল হক সরকারের বাড়িতে যান। বাড়ির অন্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষে ওই দিন সকাল ১০ টার দিকে বাড়িতে ফিরেন। বাসায় ঢুকেই স্বামী এলিম সরকারের লাশ দেখতে পান। তখন স্বামীর গলার নিচে ১টি ও পেটে ১১টি ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের ১টি আঘাত দেখতে পান বলে জানান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এলিমের বাবা ফজল হক সরকার বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। যেহেতু নিহত ব্যক্তি আশুলিয়ায় ডিস ব্যবসা করতেন। তাই হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটি ডিস ব্যবসা কেন্দ্রিক ঝামেলায় ধাবিত করতে চেয়েছিলেন কেমিলি। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা।
[৫] এসপি খোরশেদ আলম বলেন, মামলাটি আশুলিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআইও তদন্ত করছিলো। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তে আসামিদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেন। সেই সুবাদে স্থানীয় ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় এক পর্যায়ে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২০১৯ সাল থেকে তাদের এই প্রেম চলছিলো। পরে বিষয়টি স্বামী এলিম সরকার টের পেয়ে যান। তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও জানাজানি হয়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। ধরা খেয়ে যাওয়ার কারণেই স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী কেমিলি।
[৬] প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে হত্যাকান্ড সংঘটিত করতে চাইলেও ব্যর্থ হন। পরে পিন্টু একাই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেমিলি রাতেই তার স্বামীকে দইয়ে সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন। পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী গত ২৮ মার্চ সকাল আনুমানিক ৮-৯ টার মধ্যে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় ঢুকেন। নিস্তেজ পড়ে থাকা এলিমকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে বাসার সিসি ক্যামেরা ও ডিভিআর নিয়ে পালিয়ে যান। এই ঘটনায় পিন্টুর বন্ধু পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম এখনই বলা যাচ্ছে না।