রউফুল আলম: বাঙালিরা নিজ দেশে অনিয়ম করে। অনৈতিকতার সাথে জড়ায়। কিন্তু বিদেশে গেলে ভদ্র হয়ে যায়। আমেরিকায় যতো ক্রাইম হয়, তার বেশিরভাগ রিপোর্ট আসে আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে। আমেরিকান হোয়াইটও আছে। ল্যাটিন আমেরিকান আছে। কিন্তু বাঙালির নাম শোনাই যায় না। যে বাঙালি উচ্চশিক্ষিত নয়, সেও আমেরিকায় এসে কয়েক বছর পর বাড়ি কিনে ফেলে। গাড়ি কিনে ফেলে। অথচ আমেরিকার বহু মানুষ একটা বাড়ি কিনতে হিমশিম খায়। কারণ বাঙালি সঞ্চয় বুঝে। মিতব্যয় বুঝে। বিদেশে আসলে অপচয় কম করেÑএগুলো তো জীবনের জন্য অপরিহার্য শিক্ষা।
বাঙালিদের বাড়ির আঙিনায় গিয়ে দেখবেন পুঁইশাক, কুমড়ো শাক, লাক শাক। হরেক রকমের সবিজ করছে। বাগান করা একটা আনন্দ। আবার সেখান থেকে ফ্রেশ খাবারও পাচ্ছে। আমেরিকানদের মধ্যে এমনটা খুব দেখা যায় না। ওরা ফুলের বাগান করে। কিন্তু বাঙালির মতো ধৈর্য্য নিয়ে হরেক রকমের সবজি চাষ করে না। বাঙালিরা ফুলের বাগানও করে, সবজির বাগানও করে। যেখানে দুই হাত জায়গা পায়, সেখানেই সোনা ফলানোর নেশা বাঙালি ছাড়া অন্যদের মধ্যে দেখা যায় না।
নর্থ আমেরিকার কথা বাদ দেন। ইউরোপের দেশগুলোতে বাঙালিরা আবাদ করতে, বাগান করতে পছন্দ করে। ইউরোপের অনেক দেশে বাংলাদেশিরাই বহুজাতের সবজির আবাদ সূচনা করেছে। বাণিজ্িযকভাবে উৎপাদন করছে। মধ্যপ্রাচ্যে কৃষকাজের পেছনে বাংলাদেশিদের অবদান অনেক। বাংলাদেশের যে ছেলে কিংবা মেয়েটা দেশে একটা ভালো চাকরি পায় না, সেই দেখবেন ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় ল্যাবে পিএইচডি করছে। পোস্টডক করছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়ায় বাংলাদেশের বহু ছেলে-মেয়ে। আমেরিকার এমন কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই, যেখানে একজন-দুজন বাংলাদেশি পাওয়া যাবে না। দেশে সবচেয়ে বেশি টাকাও পাঠায় এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ওরা কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠায়। আর একদল দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে পাঠায়। কী দুর্ভাগ্য!
বাংলাদেশিরা বিদেশে রাজনীতিতে পিছিয়ে ছিলো। এখন সেখানেও এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথম প্রজন্ম এসে অর্থনৈতিক সংগ্রাম করতে হয়। ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সংগ্রাম করতে হয়। তাই রাজনীতিতে সফল হওয়ার সুযোগ কম থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রজন্ম রাজনীতিতেও ভালো করছে। ইউরোপের প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশি ও তার বংশদ্ভুতরা রাজনীতি করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিশ্রমও করে অনেক। একই মানুষ দেশে থাকলে এতো পরিশ্রম করতো বলে মনে হয় না। তাহলে এই মানুষগুলোকেই যদি আপনি একটা সঠিক ব্যবস্থাপনা দিতে পরেনÑ দেশকে তারা কোথায় নেবে ভাবতে পারেন? দশটা পদ্মা সেতুর চেয়ে অনেক বড় কাজ হলো ব্যবস্থাপনা মেরামত করা। জানি না এই বোধটুকু আমাদের আছে কিনা!
আপনার মতামত লিখুন :