আফরোজা সরকার: [২] শীলা ও মমিন দুজনেই তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু পেশায় তারা দুজন প্রতারক। বিভিন্নভাবে ব্লাকমেইল করে মানষেকে অপহরণ করে অর্থ নেয়। আবার কখনো প্রেম ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে শীলা। দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ দুজন। সহজ, সরল, চাকরিজীবি ও বিত্তবান পুরুষদের টার্গেট এই চক্রের।
[৩] সম্প্রতি এক শিক্ষককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কৌশলে অপহরণ করে শীলা। পরে একটি বাসায় নিয়ে অপরিচিত নারীদের সাথে জোরপূর্বক তার ছবি তুলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষকের অভিযোগে প্রতারক শীলা ও মমিনকে গ্রেফতার করেছে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
[৪] শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান।
[৫] সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শীলা ও মমিন বিভিন্ন নামে ও পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। তাদের ফাঁদে প্রতারিত হয়ে অনেকেই সর্বশান্ত। গত ১৯ আগস্ট দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ফারুক হোসেন নামে এক শিক্ষক প্রতারিত হয়ে ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার (২০ আগস্ট) দিবাগত রাতে রংপুর নগরের কটকিপাড়া পিটিআই রোডস্থ ভাড়া বাসা হতে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৬] গ্রেপ্তার শাহিনা বেগম ওরফে শীলা আক্তার ওরফে ইসা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কাচনিয়া গ্রামের কাশেম আলী ওরফে সমশের আলীর মেয়ে। অপর আসামি মো. মমিন একই জেলার বোঁচাগঞ্জের সেতাবগঞ্জ মিল রোডের মৃত গুরুচরন চক্রবর্তীর ছেলে। মমিন সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এর আগে তার নাম ছিল তপন চক্রবর্তী। অপহরণ করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মহানগর পুলিশের কোতয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
[৭] কাজী মুত্তাকী জানান, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ফারুক হোসেন ২০-২৫ আগে তার স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে শীলা আক্তারের সাথে তাদের পরিচয় হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে শীলা নিজেকে নার্স (সেবিকা) পরিচয় দিয়ে ভালো চিকিৎসক দেখানোর জন্য ওই শিক্ষককে রংপুরে আসার পরামর্শ দেন। এই সুবাদে শীলার সাথে প্রায়ই মোবাইল ফোনে তাদের কথাবার্তা হতো। গত ১১ আগস্ট ওই শিক্ষক শীলা আক্তারের কথায় আশ্বস্ত হয়ে রংপুরে এসে তার দেখা করেন। চিকিৎসকের চেম্বারে বসতে দেরি হবে অযুহাত দেখিয়ে শিক্ষক ফারুক হোসেনকে বিশ্রামের জন্য নিকট আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যান শীলা আক্তার। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে নিয়ে যাবার পর খাটে বসিয়ে অপরিচিত নারীদের সাথে শিক্ষক ফারুক হোসেনের ছবি তোলেন শীলা ও মমিনসহ কিছু অজ্ঞাত লোকজন। ছবি তুলতে বাধা দিলে তারা ওই শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে, অন্যথায় অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার ভয়ভীতি দেখান। ফারুক হোসেন লজ্জার ভয়ে তাদেরকে বিকাশের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা দেন। পরে তাদের সমস্ত শর্তে রাজি হয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
[৮] এ ঘটনাটি জানার পর অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মহানগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ডিবি) ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শীলা আক্তার ও মমিনকে গ্রেফতার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজন অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। তারা বিভিন্ন সময় ছদ্ম নাম ধারণ করে রংপুর মহানগর, পার্বতীপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জায়গায় কৌশলে বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমানে টাকা আত্মসাৎ করেছে।