রাশিদুল ইসলাম : [২] ভারতের বিজেপিশাসিত আসাম বিধানসভায় ‘আসাম ক্যাটল প্রিজারভেশন বিল ২০২১’ বা গো-সংরক্ষণ বিল পাস হয়েছে। ওই বিল পাসের ফলে আসামে হিন্দু, জৈন, শিখ ও অন্যান্য ধর্মের কোনও মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে গরুর গোশত বিক্রি করা যাবে না। বিজেপি বিধায়করা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কী জয়’ ধ্বনি দিয়ে ওই বিলকে সমর্থন করেন।
[৩] মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা গো-সংরক্ষণ বিলের পক্ষে অত্যন্ত জোরালো সাফাই দেন। হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব বজায় রাখতে এই বিলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গোহত্যায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এটা করা হয়েছে হিন্দু- মুসলিম সংঘাত এড়ানোর জন্য। যেসব স্থানে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি থাকেন সেসব জায়গায় গোহত্যা বা গরুর মাংস খাওয়া উচিত নয়। এজন্যই পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে। যে স্থানে হিন্দু নেই সেখানে গোমাংস খেতে বাধা দেওয়া হয়নি। আসামে সত্তর/আশি হাজার জনবসতি আছে যেখানে হিন্দুর বংশ নেই’ বলেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা মন্তব্য করেন।
[৪] কংগ্রেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, এই বিলে বাস্তবে কিছু নেই। নেতিবাচক মানসিকতা থাকলে কিছুই হবে না। মৎস্য ভগবান বিষ্ণুর অবতার, তাই বলে কী আমরা হিন্দুরা মাছ খাওয়া ছেড়ে দেবো? উত্তর প্রদেশে গোহত্যা নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানে রাস্তাঘাটে গরুর ছড়াছড়ি। গরু রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। আসামেও সীমান্ত এলাকায় যখন গরু ধরা পরে রাখার জায়গা পাওয়া যায় না।
[৫] আসাম বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া বলেন, এই বিল কার্যকরী হলে গরু বিক্রি অবৈধ হবে। এতে দুগ্ধ ব্যবসা আরও ব্যয়বহুল হবে। ৫০/৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে গরুর ভরণপোষণ করা অসম্ভব। যেসব রাজ্যে এমন কঠোর গো-সংরক্ষণ আইন আছে, সেসব রাজ্যে স্ত্রী গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি কম। পশ্চিমবঙ্গে এমন আইন না থাকায় স্ত্রী গরুর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
[৬] দেবব্রত শইকিয়া আরও বলেন, গোটা বিশ্বে দ্বিতীয় গোমাংস রফতানিকারক দেশ হচ্ছে ভারত। ২০১৮ সালে ভারত ১.৯ লাখ টন গোমাংস রফতানি করেছে। দু’দশকের মধ্যে ভারত দুধ উৎপাদন ১৮৫ মেট্রিক মিলিয়ন টন করেছে মাত্র এক বছরের মধ্যে। ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পিছনে ফেলে দেওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে এ ধরণের বিধিনিষেধ জারি হলে আমাদের আর্থিক অবস্থ দুর্বল হওয়াটা নিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা দেবব্রত শইকিয়া।