শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০২১, ০৪:৩৭ সকাল
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০২১, ০৪:৩৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনাকালীন জরুরি ওষুধের চাহিদা সর্বোচ্চ, তবে সরবরাহ কম

নিউজ ডেস্ক: করোনা রোগীদের নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ওষুধ নেই। এজন্য উপসর্গভেদে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জরুরি ওষুধ। করোনা রোগী বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী এ প্রবণতায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ডেঙ্গু। উচ্চমাত্রার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এটি। এতে কাঠামোগত চিকিৎসার পাশাপাশি জরুরি ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে ফার্মেসি থেকে চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না রোগীর স্বজনরা। এজন্য সরবরাহ সংকটকে কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরি ওষুধের সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করছে তারা।

দেশের পাঁচটি বড় ওষুধ উৎপাদক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ওষুধের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে প্যারাসিটামল জেনেরিক ওষুধের। মূলত মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডার জন্য এ ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। ওষুধটির চাহিদা বৃদ্ধিতে বাড়তি ভূমিকা রাখছে ডেঙ্গুর প্রকোপও। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ওষুধটির চাহিদা বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। ফার্মেসিগুলো বলছে, চাহিদা অনুযায়ী এ ওষুধের সরবরাহ পাচ্ছে না তারা।

রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্যারাসিটামলের চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। সুলভমূল্যের এ ওষুধটির চাহিদা দেশের বাজারে এখন শীর্ষে। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে দিনে ১০ জন ক্রেতা ওষুধটি কিনতেন, সেখানে এখন ৫০ জন প্যারাসিটামল চাচ্ছেন। একই সঙ্গে সর্দি, চর্মরোগের জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন (ওরাল) জেনেরিক ওষুধের চাহিদাও তিনগুণের মতো বেড়েছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে প্রয়োগ করা হয় মক্সিফ্লক্সাসিন জেনেরিকের ইনজেকশন ও সেবনের ওষুধ (ওরাল)। এতে রোগীদের সংকটাপন্ন অবস্থা কেটে যায়। এ ওষুধের চাহিদাও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ গুণ বেড়েছে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এ ওষুধটি উৎপাদন হয় জটিল প্রক্রিয়ায়, যা সময়সাপেক্ষ। বিভিন্ন ভিটামিনের সংমিশ্রণে তৈরি হয় ভাইডালিন ইনজেকশন। এটির চাহিদা বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ। দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান ইনজেকশনটি উৎপাদন করে। যে কারণে এটিরও সংকট রয়েছে। সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের রক্তের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োগ করা হয় এনোক্সপেরিন। ওষুধটি উৎপাদন করে দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ইনজেকশনের মাধ্যমে এটি রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে ১০ গুণের বেশি চাহিদা হওয়ায় এনোক্সপেরিনেরও সরবরাহ সংকট রয়েছে। করোনা রোগীদের মাধ্যমিক পর্যায়ের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যাজিথ্রোমাইসিন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। রোগীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ওষুধটি কার্যকরী হওয়ায় চিকিৎসকরা এটি প্রয়োগ করে থাকেন। বর্তমান বাজারে ওষুধটির চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ।

করোনা চিকিৎসায় রেমডিসিভির ইনজেকশন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর পরও দেশে ওষুধটির সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে। বেক্সিমকো, হেলথ কেয়ার, স্কয়ারসহ আটটি প্রতিষ্ঠান এর উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানভেদে ২ থেকে ৫ হাজার টাকায় প্রতিটি ভায়াল বিক্রি হচ্ছে। তবে সংকটের কারণে অতিরিক্ত মূল্য রাখছে ফার্মেসিগুলো।

ওষুধটির চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) কর্মকর্তারাও। সরকারি এ সংস্থার উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড ওষুধ উৎপাদন করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে। তবে সব ওষুধ তারা উৎপাদন করে না। ফলে সরকারি হাসপাতালের জন্য দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কাছে চাহিদা দিলে তা নিয়ম মেনে কেনা হয়। তবে রেমডিসিভিরের যে চাহিদা দেয়া হয়, তা সব সময় কেনা যায় না। অর্ধেকের মতো ঘাটতি থাকে। পুরনো চাহিদা পূরণের আগেই নতুন করে চাহিদা দেয়া হয়।

কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের মধ্যে সংকটাপন্নদের একটেমরা নামের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধটি উৎপাদন করে না। এ জেনেরিকের ভিন্ন ওষুধ রয়েছে। তবে চিকিৎসকরা সুইজারল্যান্ডের ‘রোস’ নামের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের একটেমরাকেই প্রয়োগের পরামর্শ দেন। আমদানীকৃত ৪০০ এমএল ওষুধের বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকার বেশি। দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান ও রোসের বাংলাদেশের এজেন্ট এটি বাজারজাত করে। তবে চাহিদা ও আমদানিতে ঘাটতি থাকায় উচ্চ দামে ওষুধটি বিক্রি হতে দেখা যায়।

জরুরি এসব ওষুধের সরবরাহ সংকটের কথা বলা হলেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এটি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারাও নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ফলে রোগীদের পক্ষ থেকে যতটা সংকটের কথা বলা হচ্ছে, সরবরাহের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের উপব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মিজানুর রহমান বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, করোনা মহামারী ও ডেঙ্গুর ফলে মূলত ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ওষুধের মাসিক চাহিদা ১০ হাজার ভায়াল থাকলেও তা বর্তমানে এক লাখ ছাড়িয়েছে। এতে সর্বোচ্চ উৎপাদনে গিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কিছু ওষুধ খুবই জটিল প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। ফলে চাইলেও অনেক সময় চাহিদার সবটুকু সরবরাহ করা কঠিন।

এদিকে শ্বাস প্রদাহের (আরটিআই) জন্য বিভিন্ন ইনজেকশন ও সেবন (ওরাল) ওষুধের চাহিদার মাত্রা বেড়েছে। ওষুধটির চাহিদা চার থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে। যে কারণে রোগীর স্বজনরা ওষুধ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ফিরে আসছেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে উচ্চদামে এ ওষুধ কিনছেন তারা। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্যারাসিটামল ও শ্বাস প্রদাহের ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে জরুরি এসব ওষুধের রফতানিও বেড়েছে। ফলে রফতানি ও দেশীয় চাহিদা মাথায় রেখেই উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। ল্যাবএইড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ গোলাম রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্যারাসিটামল জেনেরিকের যে ওষুধ প্রস্তুত করা হয়, তা আগের চেয়ে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত চাহিদা বেড়েছে। অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও অ্যান্টি হিস্টামিন জেনেরিক ওষুধের চাহিদা ৫০ শতাংশের মতো বেড়েছে।

ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএম শামীম মনে করেন করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে জরুরি ওষুধের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি কৃত্রিমভাবে সংকটও তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। এর পরও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহারের চেষ্টা করছে।

তবে চাহিদা সর্বোচ্চ হলেও জরুরি ওষুধের ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান। তিনি বলেন, দেশে চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশীয় প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে থাকে। স্থানীয় বাজারের পুরোটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ওষুধ। স্থানীয় চাহিদা বেড়েছে, একই সঙ্গে বিদেশে দ্বিগুণ রফতানি হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা মেনেই বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ দাম বাড়ায়নি। কোনো চক্র দাম বাড়ালে তাতে সরকারি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

জরুরি ওষুধের চাহিদা বাড়ার বিষয়টি মানতে নারাজ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা বাড়ার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, সারা দেশের কোথাও ওষুধের সংকট নেই। কেউ ওষুধের দামও বাড়ায়নি। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়