হাসান মোরশেদ: খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে জামিন পাওয়া যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় নয়। অনাদিকাল থেকে যুদ্ধে নারী ও শিশু হত্যা অপরাধ, পুরুষ হত্যা নয়৷ পুরুষ শত্রুর সাথে যে আচরণ করা যায়, নারী শত্রু হলেও তার সাথে সেই আচরণ করা যাবে না। আইনের অনেক ধারা নারীকে সুরক্ষা দেয়, পুরুষকে নয়। এই প্রটেকশনের অব্যবহার হয় না তাও নয়৷ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা মামলা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে।
তবু নারী ও শিশু বিশেষ প্রটেকশন পান। ‘সমানাধিকার দাবী করলে বাসে আলাদা সিট কেন’? এ জাতীয় কুতর্ক অনেকেই করেন, এগুলো নারী বিদ্বেষী কুতর্কই। যেমন- ‘পুরুষ খালি গায়ে থাকলে নারী কেন পারবে না’? এসব হলো তসলিমান নাসরীনের নিম্নশ্রেনীর ফেমিনিস্ট যুক্তি। ফেমিনিজম ব্যাপারটা এর চেয়ে আরও বড় লড়াইয়ের ক্ষেত্র।
নারী যদি অভিযুক্ত হন তাহলে তাঁর তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বিশেষ সতর্কতার সাথে করা উচিত। সেই নারী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধর কেউ হন কিংবা বস্তির মাদক বিক্রেতাই হন। যেকোনো পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া মানুষের সভ্য হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
এর সাথে সম্পর্কিত আরেকটা চিন্তা যোগ করা যায়। কেউ অভিযুক্ত মানেই অপরাধী নন, যতোক্ষণ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কেউ আদালত কর্তৃক অপরাধী বলে ঘোষিত নন- ততোক্ষণ আইনের দৃষ্টিতে তিনি নিরাপরাধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কখনোই বিচার নয়Ñ অভিযুক্তকে আদালতে সোপর্দ করা এবং আদালতের অনুমতিক্রমে তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ, বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতে সহায়তা করা। ধরা যাক একজনকে কয়েক বোতল ফেনসিডিল-সহ গ্রেপ্তার করা হলো। মিডিয়ার সামনে বলা হলো মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু আদালতে শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করা গেলো না তাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে, সে আসলে মাদক গ্রহীতা। প্রাথমিক সব অভিযোগ তো শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় না। তাহলে গ্রেপ্তারের সাথে সাথে তাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করে যে প্রচার করা হলো, সেই মর্যাদাহানীর দায় কে নেবে?
এমনকি দন্ডিত অপরাধীরও মর্যাদাহানীর অধিকার কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গের নেই। যে যতোটুকু অপরাধ করে, যার যতোটুকু অপরাধ আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় ঠিক অতোটুকুই অপরাধী একজন। সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীকেও এর বেশি ভোগানো ক্ষমতার অপচর্চা, আইন বহির্ভূত এবং অন্যায়। লেখক ও গবেষক