হাসান হাফিজ: [২] বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২২ শ্রাবণ। এই সাহিত্যসাধক বলেছিলেন, “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক/ আমি তোমাদেরই লোক।” ৮০ বছর বয়সে ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট তিনি পরলোকগমন করেন। বাংলাদেশের মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় আজ কবিস্মরণ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ ছিল অচ্ছেদ্য। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রগান ও রচনাবলি স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ, প্রাণিত করেছে।
[৩] অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে কবির জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে। বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন ছিলেন এই সাহিত্যব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, কথাশিল্পী,অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, নাট্যকার, সম্পাদক, দার্শনিক, সঙ্গীতজ্ঞ, চারুশিল্পী, শিক্ষাব্রতী, পর্যটক। সাহিত্যে তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে। জীবদ্দশায়ই তিনি বিশ্বসমাজে খ্যাতি পরিচিতি লাভ করেন।
[৪] মাত্র আট বছর বয়সে কাব্যরচনা শুরু। তাঁর মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ৫২টি। দীর্ঘজীবনে আরো লিখেছেন ১৩টি উপন্যাস, দুই হাজার গান, ৩৮টি নাটক,৯৫টি ছোটগল্পসহ বিচিত্র সব রচনা। তাঁর রচনা অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রবীন্দ্ররচনা গুরুত্বের সঙ্গে পঠিত হয়। রবীন্দ্ররচনার বিপুল সম্ভার নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। বাংলাসাহিত্যকে তিনি বিশ্বমানে উন্নীত করেছেন। স্থাপন করেছেন নতুন ও সম্মানজনক উচ্চতায়।
[৫] রবীন্দ্রজীবনের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কেটেছে বাংলাদেশে। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনার সাজাদপুর, রাজশাহীরপতিসরে পৈতৃক জমিদারি তদারকিসূত্রে দীর্ঘ সময় তিনি অবস্থান করেছেন এ্সব অঞ্চলে। তাঁর অনেক উল্লেখযোগ্য নান্দনিক রচনার জন্ম হয়েছে সেইসময়। সরকারি উদ্যোগে পাবনার সাজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
[৬] বাংলাদেশে গত শতাব্দীর শেষ দিক থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়ে আসছে। রবীন্দ্রনাথকে একালের আরেক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অভিহিত করেছেন ‘হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব’ এবং ‘গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক’ হিসেবে।
[৭] রবীন্দ্রনাথকে তাঁর জীবদ্দশায় অনেক নিকটাত্মীয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুশোক সইতে হয়েছে। কেমন ছিল তাঁর মৃত্যুচিন্তা? গভীরভাবে জীবনবাদী এই মহৎ মানুষটি বলেছেন, “মৃত্যু না থাকলে জীবনের কোনো মানে নেই। আর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে জীবনকে না দেখলে অমৃতের সন্ধান মেলে না। এই জীবন মরণের খেলা দিয়েই জগৎ সত্য হয়ে উঠেছে।”
আপনার মতামত লিখুন :