সনত চক্র বর্ত্তী: [২] করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদেশে নেয়া হয়েছে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ। সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের নিম্ন মধ্যবিত্ত, অতি দরিদ্র সীমার আয়ের মানুষগুলো। নিম্নবিত্ত-দরিদ্ররা সরকারি-বেসরকারি কিছু সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তদের না অনেকে মানবতার জীবন যাপন করছে ।
[৩] করোনায় স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার অনেক কম। ফলে একদিকে খাবার কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ, অপরদিকে সামাজিক মর্যাদার কারণে কারও কাছে চাইতেও পারছেন না। নিরবেই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে তাদের। এদিকে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের লকডাউনকে ঘিরে স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্যেরও ঊর্দ্ধগতি লক্ষ্য করা গেছে।
[৪] জানা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। সরকারও গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে মধ্যবিত্তের পাশে নেই কেউ। ঘরে খাবার না থাকলেও মধ্যবিত্তরা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। বর্তমানে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়েছে। বাজারে এসব পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর। এমনভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে ঘরে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, মা, বাবা, ভাই, বোন নিয়ে কিভাবে যে সংসার চলবে ভাবলেই দিশেহারা হয়ে তারা।
[৫] জেলার বড় একটি অংশ মধ্যবিত্ত। তারা ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের ব্যবসা করে সংসার চালান। কসমেটিকস্, কাপড়ের দোকান ও ইলেকট্রনিক্সসহ হরেক রকম পণ্যের দোকান রয়েছে মধ্যবিত্তদের। এসব দোকান থেকে করা আয়ে তাদের সংসার চলে। এর বাইরে তাদের আয়ের কোন পথ্য নেই।
[৬] লকডাউনে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসা ছাড়া বাকি ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। দোকান পাট খোলার উপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মোট কথা তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে গত কয়েকদিন ধরে।
[৭] ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলা বাজারের কসমেটিক ব্যবসায়ী সুমন, কাপড় ব্যবাসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে খাচ্ছি। চলমান লকডাউনে গত কয়েকদিন ধরে দোকান পাট বন্ধ রয়ে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এঅবস্থায় দোকান ভাড়া ও সংসার চালাতে কোনো উপায়ন্তর না দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
[৮] কানাইপুর এক ব্যবসায়ীক বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে এখন আমরা চোঁখেমুখে অন্ধকার দেখছি। কীভাবে দোকান ভাড়া দেব, কীভাবে সংসার চালাব, সেই চিন্তায় ঘুম আসে না আমাদের। অপরদিকে এমন কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছি না আমরা।
[৯] তারা জানান, গত বছরও প্রায় একইদিনে লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ রয়ে ব্যবসার অনেক লোকশান হয়েছে। এবছর ভেবেছিলাম ব্যবসা করে কিছুটা হলেও লোকশান পুশিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু এবছর লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে কিভাবে যে আমাদের সংসার চলবে তা একমাত্র আল্লাহই জানে।
[১০] এদিকে, রোববার (২৫ জুলাই ) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে কাঁচা মালের বাজারেও ওস্তা, মরিচ, ঢেড়ঁস শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যে দামও লকডাউনকে ঘিরে অনেকটা বেড়ে গেছে। বাজারের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসায়ীরা পেটের দায়ে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বেচাবিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে।
[১১] বেয়ালমারী বাজারে ফারুক নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। তিনি বলেন, বিপদে আছি, সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষুলজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করতে পারছি না। ওই যে আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। তিনি খুব আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কোনো কষ্ট নেই, আছে শুধু সুখ। কিন্তু এর আড়ালে আমরা যে কত কষ্টে জীবনযাপন করি, তা বোঝানো যায় না। কেউ বোঝারও চেষ্টা করে না। সম্পাদনা: হ্যাপি