শিরোনাম
◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ অহেতুক চাপ সৃষ্টি করতে জামায়াতের কর্মসূচি: মির্জা ফখরুল ◈ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সাত দল ◈ স্ত্রী আসলেই নারী কি না প্রমাণ দেবেন ম্যাখোঁ ◈ আগামী বছরের বইমেলার সময় পরিবর্তন ◈ সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা জানালো ভারত ◈ সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর: অবসরে বাড়ছে সুযোগ-সুবিধা, কমছে অপেক্ষাকাল ◈ আগামীকাল ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় ◈ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় যমুনা টিভির সাংবাদিকসহ আহত ৫ ◈ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে: প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ১৬ জুলাই, ২০২১, ০৩:১১ দুপুর
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০২১, ০৩:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: আহারে জীবন!

দীপক চৌধুরী: একশ্রেণির মালিকদের লোভ-লালসায় বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা, অবহেলায় মৃত্যু, শ্রমিক হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু কঠিন বিচার কী হচ্ছে? শুধু আফসোস্ করতেই শোনা যায়। এর বেশি নয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের সেজান জুসের কারখানায় অন্তত ৫২ জন শ্রমিককে জীবন্ত অঙ্গারে পরিণত হওয়ার খবরটি এখন কয়েকদিন ধরে কোনো গণমাধ্যমে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আসলে এদেশে অঅিংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনার পর সমাজে ও রাষ্ট্রে একটি ঝাঁকুনি পড়ে। একটানা দু-তিনদিন এটা নিয়ে বাজার গরম করা খবর, রাতের টকশো, বড়বড় কথাবার্তা একশ্রেণির মানুষের মুখ থেকে শক্ত শব্দগুলো বেশ উচ্চারণ হয়ে থাকে। শোনার পর শোকাবিভূত পরিবার গভীর শ্বাস ফেলেন। এরপর ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তরা আশায় বুক বাঁধেন। এমনকি শোকার্ত মা-ও ধারণা করেন, দায়ীদের বিচার হবে। কিন্তু এটি যে এক ধরনের প্রহসনে রূপ নেয় তা তারা বুঝতে পারেন অনেকদিন পর, অনেকে বছর পর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েকদিন পর এর আর সেই স্পিড থাকে না, আমরা ভুলে যাই। রাজনীতিকদের বড় বড় আশ্বাস শুনি। তদন্ত কমিটির দৃঢ় প্রত্যয়, কমিটির রিপোর্ট আর মানবতাবিরোধী ও লোভী লোকদের দায়িত্বহীনতার তথ্য। কেউ খোঁজ নেয় না এসবে রুক্ষ রস-কসবিহীন খবরের কথা। পুকুরে ঢিল ছোড়ার পর এক ধরনের ঢেউ ওঠে, সেই ঢেউ মিলিয়ে যাওয়ার মতো যেনো আমাদের অসহায় শ্রমিক ও শিশুশ্রমিকদের জীবন। আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া শ্রমিকদের খবর কেউ রাখি না। হয়তো এরপর নতুন করে জন্ম হয়ে থাকে আরেকটি নতুন ভয়ংকর খবর।

রূপগঞ্জের ঘটনায় যা দেখলাম তাতে, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা ভঙ্গ করা হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় গেটে তালা লাগানো, কারখানাটিতে কোনোভাবেই উপর্যুক্ত নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ছিল না। গেটে তালা দিয়ে বাইরে বেরোবার রাস্তা বন্ধ করা হবে কেন? শ্রমিক ও শিশু শ্রমিক সেখানে কীভাবে কোন্ পরিবেশে কাজ করতো তা প্রকাশ করতে কী আর কিছু বাকি?

রূপগঞ্জে সেজান জুস (হাসেম ফুড লি:) -এ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যুতে মালিকসহ দায়ী দোষীদের গ্রেফতার, বিচার ও আহত- নিহত শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতি পূরণ দেওয়ার দাবি উঠেছে। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং ঘটনায় দায়ীদের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তির দাবি সবশ্রেণির মানুষের। বলা হচ্ছে, শ্রম পরিদর্শক ও কারখানা পরিদর্শক এবং ফায়ার ব্রিগেড পরিদর্শকরা যদি সঠিকভাবে তাদের পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে এই অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন শ্রমিকের প্রাণহানী ঘটত না। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে যাওয়ার মুহূর্তে শিশু শ্রমিকরা নাকি নিজের নাম ইটের টকুরো বা চক দিয়ে লিখে রেখে গেছে। আহারে জীবন!

নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যদি কোনো সুপারিশও করা হয়ে থাকে তাও লাল ফিতায় বাঁধা থাকে। স্মৃতিতে আছে সেসব হতবাঘা নিষ্ঠুরতার স্বীকার শত শত শ্রমিকের কথা। অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি! কারণ, অবকাঠামো কারণে অধিকাংশ কারখানা বা গুদামে বা ইন্ড্রাস্ট্রিতে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহারই করা যায় না!

শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা নিয়ে যেসব কথার উদয় হয়েছিল সেসব যেন ভুলে যাই আমরা! গত ২০ বছরে এমন বহু নির্মম ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন কারখানায় নিহত ও আহত শ্রমিকরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ কী পেয়েছেন? সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কী সতর্ক হয়েছে। নিয়ম মেনে কী কারখানা চলছে? শ্রমিকদের মর্মান্তিক করুণ মৃত্যুতে ঝড় ওঠে। কিন্তু আমরা তাৎক্ষণিক ভীষণভাবে কষ্ট পেলেও ভুলে যাই। নিকট অতীতে অর্থাৎ গত কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ড, স্পেকট্রাম কারখানায় ধ্বস, রানা প্লাজায় ধ্বস, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় আগুন, হামীম গ্রুপের কারখানায় আগুন, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সাধারণ শ্রমিকরা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু সেসবের বিচার কতটা হয়েছে?

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়