শিরোনাম
◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয় ◈ কত টাকার বিনিময়ে মানববন্ধনে এসেছেন তারা, এদের পরিচয় কী? আরো যা জানাগেল (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১০ জুলাই, ২০২১, ০৫:২৯ সকাল
আপডেট : ১০ জুলাই, ২০২১, ০৫:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনা মহামারির মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রেকর্ড

নিউজ ডেস্ক: বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৯ শতাংশ বেশি। বছর পেরিয়ে গেলেও অর্থবছরের শেষ মাস জুনের হিসাব প্রকাশ করেনি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। বাকি এক মাসের তথ্য পাওয়া গেলে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে বলে মনে করছেন অধিদপ্তর।

করোনাভাইরাস মহামারির এই সংকটের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে এই উল্লম্ফন দেখে অবাক অর্থনীতিবিদরা। সংশ্লিষ্টরা বলেন, মহামারিতে মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। এরমধ্যেও সঞ্চয়পত্রের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সত্যিই বিস্ময়কর। মানবজমিন

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্যে দেখা গেছে, এই সময়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

এরমধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৬১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সর্বশেষ মে মাসে ৮ হাজার ১২৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৫ হাজার ৪৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

এর আগে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। তার আগে ২০১৭-১৮ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের এই ১১ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এটি গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১৬০ শতাংশ বেশি। আর বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার।

তথ্য মতে, এপ্রিলে বিক্রি হয় ৫ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের একটি অংশ দিয়ে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছে। এ ছাড়া অন্য যেকোনো সঞ্চয় প্রকল্পের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেহেতু বেশি, সবাই এখানেই বিনিয়োগ করছে। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম; ৩ থেকে ৫ শতাংশের মতো। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ।

জানা গেছে, বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১লা জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ফলে কমতে শুরু করে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরু থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্তও তা অব্যাহত ছিল। বিক্রি কমাতে সর্বশেষ গত মে মাসে ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ নামের একটি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। এখন থেকে কোনো ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল। বিক্রি অস্বাভাবিক বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু এক মাস বাকি থাকতেই সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়েও ৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাস জুনে হঠাৎ করেই বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে।

বর্তমানে দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র প্রচলিত আছে। এরমধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১.২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৭৬ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়