শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১০ জুলাই, ২০২১, ০১:৫৮ রাত
আপডেট : ১০ জুলাই, ২০২১, ০১:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সেলিম জাহান: ‘সবার আমি ছাত্র’

সেলিম জাহান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষ উপলক্ষ্যে কথা বলছিলাম একজনের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে আমার থেকে এক শ্রেণী নীচে পড়তেন তিনি। এই কোভিড-কালে তিনিই খুঁজে বার করেছেন আমার ঠিকানা। ‘তীরন্দাজে’ আমার সাপ্তাহিক কলাম ‘চতুরঙ্গে’ আমার ‘রাতের শহর’ লেখাটি পড়েছেন তিনি। পড়েছেন রাতের ঢাকা শহর আমার চষে বেড়ানোর কথা। সেই প্রেক্ষিতে কথা তার সামান্যই, ‘পড়তেন কখন আপনি তা’হলে’? ‘কেন, ওই লাইব্রেরিতে। বলেছি তো সে কথা নানান লেখায়’, যুক্তি দেখাই আমি। ‘উঁহু, আপনি লাইব্রেরিতে বই তুলেই বেরিয়ে আসতেন’, মাথা নাড়েন তিনি, ‘আপনাকে আমিই সারাক্ষণ দেখেছি লাইব্রেরীর চাতালে বসে গল্প করতে, কিংবা শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনে আড্ডা দিতে’। সে ব্যাপারে এক মোক্ষম উদাহরণ বের করে নিয়ে আসেন তিনি, ‘এক বিকেলে রুমা আপা (তাজিন মুরশিদ) আর আপনারা ক’জন মিলে তারস্বরে ‘রঘুপতি রাঘব রাজারাম’ গাইছিলেন লাইব্রেরির বারান্দায় বসে’। তারপরই আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্বিতীয় উদাহরণ উপস্থাপন করেন তিনি, ‘শরীফ মিয়ায় আপনাকে দেখা গেছে দেদার আড্ডা দিচ্ছেন আবুল হাসান কিংবা হেলাল হাফিজের সঙ্গে।’ লা জওয়াব আমি।

‘না, মানে দুপুরের দিকে,’ আমতা আমতা করি আমি। এক লহমায় থামিয়ে দেন তিনি আমাকে। ‘দুপুরের দিকে আপনি বিভাগের সামনে মাঝামাঝি জায়গায় একটা বেঞ্চির ওপরে বসে গপ্পে মাততেন। ও বেঞ্চিটি আপনিই বার করেছিলেন ক্লাসরুম থেকে।’ ‘কিংবা’, বিরতিহীন নি:শ্বাসে বলেন তিনি, ‘কলা ভবনের একতলায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামনে বারান্দার দেয়ালে চড়ে হৈ হৈ করতেন আপনি, কামাল ভাই (শেখ কামাল) আর খুকী আপাদের (সুলতানা কামাল), সঙ্গে’। বুঝতে পারি, দক্ষ মুষ্ঠিযোদ্ধার মতো তিনি আমাকে কোণঠাসা করে ফেলছেন অতি দ্রুততার সঙ্গে। গলায় জোর আনতে চেষ্টা করি, ‘কিন্তু বিকেলে’। ‘আপনার ঐচ্ছিক বিষয়ের ক্লাসগুলো থাকত বিকেলে শহীদ মিনারের উল্টোদিকের ভবনে যেখানে গণিত, পরিসংখ্যান, ভূগোল বিভাগ ছিলো’। মনে করিয়ে দেন তিনি আমাকে। ‘ক্লাসের শেষে সুরেশদার ক্যান্টিনে পদার্থবিদ্যার ইফতি ভাই (ড: ইফতেখার আহমেদ), সাজ্জাদ ভাইদের (ড. সাজ্জাদ জহীর) সঙ্গে গল্পে মজে যেতে দেখেছি আপনাকে’। আমার অবস্হা তখন উৎপল দত্তের ‘টিনের তলোয়ার নাটকের ’ এই রে ধরে ফেলেছের' মতো। তবু শেষ চেষ্টা করলাম। একটু হেসে বললাম, ‘মানে সময় একটা বার করে নিতাম’।

‘সময় বার করে নিতেন? কোথা থেকে বার করতেন?’ জেরা তার থামে না। ‘বিতর্কে দৌঁড়ুতেন নানান জায়গায়। এমন কি বাংলাদেশ পর্যটন করর্পোরেশনের ‘পর্যটনই শান্তির ছাড়পত্র’ এ বিতর্কও করেছেন প্রজ্ঞা লাবনীদের সঙ্গে। বেতারের ‘নবীন কন্ঠ’ এ অংশ নিয়েছেন হরহামেশাই আতিউর (ড: আতিউর রহমান), সোহেল (প্রয়াত সোহেল সামাদ), ফেরদৌসদের (ফেরদৌস সাজেদীন) আর বাবলী আপাদের (ড. শাহীন মমতাজ) সঙ্গে। প্রায়শই সন্ধ্যায় আপনাকে দেখা যেত নিউমার্কেটের দ্বিতীয় গেটের কাছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল’। একেবারে বসিয়ে দেন তিনি আমাকে তার যুক্তির মুষ্ঠাঘাতে। ‘তারপর’। বুঝলাম তার বক্তব্য এখনও শেষ হয় নি। ‘নিত্য আপনাকে দেখা যেত বেনু আপার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকায় হাঁটছেন- হাত ধরে।’ বুঝতে পারি না তাঁর আপত্তিটা আসলে কোথায়- হন্টনে না হস্তধারনে, নাকি দুটোতেই।

‘আবার লিখেছেন রাতে আপনি শহর চরে বেড়াতেন তাজুল ভাইয়ের সঙ্গে। পড়তেন কখন আপনি তা’হলে’? যে জিজ্ঞাসা দিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন, সে প্রশ্ন দিয়েই তিনি শেষ করেন। ততোক্ষণে আমি তিনটে জিনিস বুঝে গেছি। এক, এ ব্যক্তিটির স্মৃতিশক্তি ঈর্ষনীয়; দুই, এর যুক্তি ক্ষুরধার; এবং তিন, সত্তর দশকের প্রথম দিকে আমার দিনপঞ্জী এর নখদর্পনে। ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ আমার মাথায় ভর করে। আমি ভাবতে থাকি কেউ এ ব্যক্তিটিকে আমার পেছনে লাগিয়েছেন কিনা। আসলে যে প্রশ্নটি তিনি আমাকে করেছেন ‘পড়তেন কখন আপনি তা’হলে’, তার উত্তর কিন্তু তিনিই দিয়ে দিয়েছেন। যে সব তথ্য তিনি আমার সম্পর্কে দিয়েছেন, তার মাঝেই আ প্রশ্নের উত্তর আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তো শুধু শ্রেণিকক্ষের মধ্যে আবদ্ধ নয়, সীমিত নয় পুস্তকের মধ্যেও। বিশ্ববিদ্যালয় তো ‘বিশ্বের বিদ্যালয়’ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশ্ব বীক্ষনের এবং একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার বিদ্যালয়। বিশ্ব মানবতা ও বিশ্ব নাগরিকত্ব বোধ তৈরীর প্রতিষ্ঠান এটি। কেন্দ্র এটি মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত চিন্তা চর্চার। আমার অনুজপ্রতিম ব্যক্তিটি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকালীন দিনপঞ্জীর যতগুলো বিষয় উল্লেখ করেছেন, সবই তো আমার বৃহত্তর পাঠ্যসূচী। বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে কত নতুন কথা শিখেছি, সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডায় জেনেছি কেমন করে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সহমর্মিতার, আস্থার, বিশ্বাসের। সাহিত্য প্রীতির ভিত শক্ত হয়েছে শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনেই তো। বিতর্কই তো শিখিয়েছে যুক্তি, সহনশীলতা এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার। কখন আমি পড়ি, এ প্রশ্নটি যিনি তুলেছিলেন, তিনি আসলে বিস্মৃত হয়েছিলেন যে চূড়ান্ত বিচারে ‘সবার আমি ছাত্র’। ফেসবুক থেকে

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়