মাসুদ রানা: বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটীর প্রবীণ ও অসুস্থ সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর মৃত্যু কোনো অকসাৎ ঘটনা নয়। এর জন্যে তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটীর বাকী সদস্যদের নিশ্চয় মানসিক প্রস্তুতি ছিলো। আর, সম্ভবতঃ সে-কারণেই ৬ই জুলাইয়ে তার মৃত্যুর পরদিন ৭ই জুলাইয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটী একটি অবিচুয়্যারি (মৃত্যুতে প্রকাশিত জীবনী) প্রকাশ করে। আমি অখণ্ড মনোযোগের সঙ্গে লেখাটা পড়েছি। যেমনটি আশা করা হয়, তেমনটিই লেখা হয়েছে, প্রয়াত নেতার মহত্ত্বের বিবরণ। এসব ঠিক আছে। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে আমার চোখ আটকে গেলো নীচের বাক্যটি পড়েঃ ‘তাকে কার্যকরীভাবে সাহায্য করার মতো ও ভুলভ্রান্তি থেকে মুক্ত করতে সক্ষম উপযুক্ত নেতাও গড়ে ওঠেনি, ফলে বহু সিদ্ধান্তই তাকে এককভাবে নিতে হয়েছে।’ সদ্য প্রয়াতে শীর্ষনেতা মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সম্পর্কে তার দল বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটীর ওপরের কথাটির অর্থ কী?
এটি কি আত্ম-বাতিলীকরণের (self-cancellation) সিগনেচার নয়, যা বিশ্লেষণের দাবি রাখে? প্রথমতঃ দলের শীর্ষনেতাকে ভুলভ্রান্তি তকে মুক্ত করতে সক্ষম উপযুক্ত নেতার প্রয়োজন হলে, দলের শীর্ষনেতা কীভাবে যৌথজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকৃত রূপ হিসেবে গড়ে ওঠে? দেখা যাচ্ছে, শীর্ষনেতাকে ভুল থেকে মুক্ত করতে ভুলের ঊর্ধ্বে আরও অন্ততঃ একজন উপযুক্ত নেতার প্রয়োজন হয়! দ্বিতীয়তঃ শীর্ষ নেতাকে ভুল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম উপযুক্ত নেতার অভাবে যদি “বহু বিষয়ে সিদ্ধান্তই তাঁকে [শীর্ষনেতাকে] এককভাবে নিতে’ হয়, তখন বুঝা যায় যে, দলটিতে যৌথ নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। তাহলে, কেন্দ্রীয় কর্যপরিচালনা কমিটীর অস্তিত্বের জাস্টিফিকেইশন বা ন্যায্যতা কী? যদি যৌথ নেতৃত্বই গড়ে না ওঠে, শিবদাস ঘোষের অনুসারী দাবীদার এই দলটির কেন্দ্রীয় কমিটী গঠিত হলো কী প্রক্রিয়ায়? শিবদাস ঘোষ দল গঠনের পূর্বশর্ত হিসেবে যৌথজ্ঞান ও যৌথনেতৃত্বের বিকাশের নির্দেশ করে গিয়েছেন, সে-শর্তের পূরণ হয়েছে কি? আমি আপাতঃ এখানে থামতে চাই, যদিও দলটি প্রদত্ত বিবৃতির কণ্টেণ্ট এ্যানালাইসিস বা ক্রিটিক্যাল এ্যানালাইসিস করলে অনেক কিছুই হাইপোথেসাইস করা যায়। ০৭/০৭/২০২১। লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড।