সুমন্ত আসলাম: রিকশাটা পড়ে গেলো ভাঙা রাস্তায়, পানি-ঢাকা গর্তে; ভেঙে গেলো সেটার প্যাডেল, ভেঙে গেলো কুড়িগ্রাম থেকে এই রাজধানী-শহরে আসা সিরাজ ব্যাপারীর মনটাও। মিরপুর ডিওএইচএস- এ রিকশা নিয়ে ঢোকার ‘পাসপোর্ট’ লালচে-কমলা রঙের পোশাক তার গায়ে, এর জন্য ডিওএইচএস সোসাইটিকে ২০ টাকা দিতে হয় প্রতিদিন, আর রিকশা ভাড়া ১১০ টাকা। অথচ লকডাউনের দুুপুর এই ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তার কামাই হয়েছে ৪৫ টাকা। বাকি বেলা কী হবে, এটা অনিশ্চিত। তার আগেই...। এই রাস্তা ঘেষেই এমপি ইলিয়াস মোল্লা সাহেবের বিশাল সুউচ্চ মার্কেট, সেটা লাগোয়া তার পরিবারের আরো সাত-আটটা, বিশাল কাজ-কারবার, মহা হুলস্থ’ূল ব্যাপার। সেগুলোর সামনেই কিনা মিরপুর ক্যান্টনমেনট ঢোকার রাস্তায় বড় বড় বেশ কয়েকটা মরণফাঁদ- প্রদীপের নিচে অন্ধকার! ভেঙে গেরেঅ আরও একটা জিনিস- একটা ফ্ল্যস্ক। রিকশায় থাকা ভদ্রমহিলার হাতে ছিলো সেটা। রাস্তায় পড়েই- ফটাস। সেটার দিকে তাকিয়ে বেদনার্ত হলো না তার চোখ, তিনি আদ্র হলেন সিরাজ ব্যাপারীর দিকে তাকিয়ে। আষাঢ়ের গুমোট গরম আর বৃষ্টিতে যে মানুষটা দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চুপ, যেন নিত্য এই সংসারে এটাই নিয়তি, এটাই উন্নয়নের আদর্শিক মডেল।
[২] বৃষ্টি হলেই প্রতি বছর আমাদের রাস্তা ভাঙে, যার কাজ শেষ হয়েছে কয় মাস আগে। আমাদের নির্মাণাধীন ব্রিজ ভাঙে, যার ওপর নিয়ে চলাচলই শুরু হয়নি। পবিত্র ঘর আমাদের মডেল মসজিদ ফেটে যায় মাত্র কয়দিনেই। ১০০ বছরের গ্যারান্টির যমুনা নদীর বাধ ভেঙে যায় এই তো দেড় যুগেই। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নির্মাণ করা ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া ঘর ভেঙে গেছে সামান্য বৃষ্টিতেই, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া গ্রামে, যা তৈরি করা হয়েছে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে।
[৩] বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, ছোট-খাটো কোনো জিনিসই আমার চোখ এড়ায় না। ১৬ বছরে দেশ থেকে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচারের কাছে ভূমি ও গৃহহীনদের এই ঘর ভেঙে পড়ার খবরটা বেশ ছোট- খাটো, খুব সামান্যই। [৪] হুমায়ুন আজাদের ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’র এই দেশে ভেঙে পড়ে কতো কিছু। কিন্তু কেউ জানে না- সব ভাঙার সেরা ভাঙ্গা হচ্ছে- মন। সেই মন ভাঙা নিয়ে বেঁচে আছি আমরা প্রতিদিন, সেখানে পুরো আকাশটা ভেঙে পড়লেই কী, না ভেঙে পড়লেইবা কী! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :