জামাল হোসেন: [২] জীবননগরের খামারিরা দুচিন্তায় রয়েছেন কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে। করোনা ভাইরাসের সংক্রোমণ বেড়েই চলেছে। উপজেলার একমাত্র পশু হাট শিয়ালমারি। হাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খামারিদের একমাত্র ভরসা জীবননগর অন লাইন পশু হাট। আর খামার থেকে যদি সরাসারি কোন পশু বিক্রি হয়।
[৩] মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জীবননগরের গরুর খামারিরা।কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গ্রামের অনেকেই স্বপ্ল পরিসরে দুই থেকে চারটি গরু পালন করেছেন। এর বাইরে আছে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা মোটাতাজ করণ খামার। সকলের মনে এ বছর উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কোরবানী ঈদের বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। অন্যান্য বছরের মতো এখনও ব্যাপারীদের দেখা মেলেনি।
[৪] গত বছর খামারিরা কোরনার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ বছর খামারিদের প্রত্যাশা ছিল ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন। এ বছর কোরবানির পশুবিক্রি গত বারের থেকেও খারাপ।
[৫] খামারিার বলেছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগেই ব্যাপারীরা এলাকায় আসেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কিনে থাকেন। এ বছর এখনও এলাকায় ব্যাপারীদের দেখা মেলেনি।
[৬] খামারিদের দাবি, করোনার কারণে বিগত বছরের চেয়ে এ বছর গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী, গরুর দামও বেশি হওয়ার কথা। করোনা পরিস্থিতিতে জীবননগর উপজেলার এক মাত্র পশুহাট বন্ধ রয়েছে। গরু বিক্রি না হওয়ার আশংকা করছেন খামারিার।
[৭] জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের কোরবানির জন্য জীবননগরে ২৬ হাজার ৭৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে।
[৮] জীবননগরের জামাল ডেইরি ফার্মের সত্বাধিকারী জামাল হোসেন খোকন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করে ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ একটি গরুর জন্য দিনে ১২০-১৬০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন গরু গুলোকে খৈল, ভুসি, খুদ, কুড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এবার ৫০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি গত কোরবানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। মনে করেছিলাম এবার গরু বিক্রি গতবারের ক্ষতি পুশিয়ে নেবো। এবার গরু বিক্রি করতে পারবো কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। পশু বিক্রি না করতে পারলে অনেকটাই লোকসান হয়ে যাবে।
[৯] উপজেলার যাদবপুর গ্রামের মসলেম উদ্দিন বলেন, ‘তিন মাস আগে এক বস্তা গমের ভূসির দাম ছিল ১হাজার ২০০টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু ভুসি ও খৈলই নয়, সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০-২৫ ভাগ বেড়েছে। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার হতাশায় রয়েছি। অন্যবছর কোরবানির দুইমাস আগে থেকে গরুর ব্যাপারীরা বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর কোনো ক্রেতা নেই।’
[১০] হরিহরনগর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ‘সারা বছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত দুইমাস ধরে নিয়মিত হাট বসছে না। আর কোরবানির আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনা খুবই কম। এ বছর কোনোভাবেই ভালো ব্যবসার আশা করা যাচ্ছে না।’
[১১] জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোরবানি উপলক্ষে গরু পালন করে থাকেন খামারিরা। তবে এখন পর্যন্ত বাজার ভালো আছে। আমাদের পক্ষ থেকে পশুপালনকারীদের প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খামারিরা সেভাবে পশুপালন করেছেন। প্রাকৃতিক
[১২] উপায়ের তুলনায় রাসায়নিকভাবে মোটাতাজা করলে খরচ বেশি হয়। আর এতে ঝুঁকিও থাকে। গ্রামপর্যায়ে পশু পালনকারীরা এসব বুঝতে পেরেছেন। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের কার্যক্রম একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি।’ উপজেলার একমাত্র পশু হাটটি বন্ধ রয়েছে। খামারিদের কথা বিবেচনা করে আমরা জীবননগর অনলাইন পশু হাট চালু করেছি। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস হাটটি সব সময় তদারকি করছে। এখানে পশুর ছরি, দাম, মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ পোস্ট করা হচ্ছে। জীবননগর অনলাইন পশু হাটটি ইতিমধ্যে ক্রেতাদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।