শেখ ফরিদ: [২] সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন বিপর্যয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে অক্সিজেন সংকটে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্বজন হারানো ব্যক্তিদের।
[৩] করোনা ডেডিকেটেড সামেক হাসপাতালে বর্তমানে ২৮৫ জন রোগী করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে এই হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় হঠাৎ করে অক্সিজেন সরবরাহে প্রেসার কমে যায়। ফলে তীব্র অক্সিজেন সংকটে পড়েন সিসিইউ, আইসিইউতে থাকা রোগীরা। ঘন্টাখানেক এ অবস্থা বিরাজ করছিল। আইসিইউ ওয়ার্ডের সামনে রোগীর স্বজনদের হুড়োহুড়ি এবং কান্নার রোল পড়তে দেখা যায়।
[৪] স্বজনদের অভিযোগ,অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন কমপক্ষে ৭ জন রোগী। রাত ৮টার দিকে যশোর থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সমস্যার সমাধান করেন।
[৫] বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে মৃত্যুবরণকারীরা হলেন-আইসিইউ ইউনিটের করোনা পজেটিভ রোগী কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আকরাম হোসেন খান (৬৩), সিসিইউ ইউনিটের মারা যায় শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৪০), শহরের কুকরালী আমতলা এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নাজমা খাতুন, শ্যামনগরের সোনাখালি এলাকার কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন, সাধারণ ওয়ার্ডের সন্ধ্যা ৭টার পর মারা যায় শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (৫৪), কালিগঞ্জের জগন্নাথপুর এলাকার সৈয়দ আলি পাড়ের ছেলে আবু জাফর মো. শফিউল আলম তুহিন, আশাশুনির নৈকাটি এলাকর বেনু গাজির ছেলে আব্দুল হামিদ (৭৫),পাটকেলঘাটার ফাতেমা খাতুন (৫৭), বাঘারপাড়ার ইদ্রিস আলী (৬২), সেনেরগাতীর রহিমা (৬০), ইটাগাছার খায়রুন্নেসা (৪৯), কুকরালীর নাজমা খাতুন (৫৫), পলাশপোলের শেখ কাদিরুল (৭৫) ও আনসার আলী (৭০)।
[৬] তবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আইসিইউ ইউনিটের আকরাম হোসেন খানের ছেলে তাজ মুহাম্মদ খান বলেন, আমার বাবা করোনা পজেটিভ ছিলেন। গত ৪৫ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। কয়েকদিন ধরে শ্বাস কষ্ট দেখা দিচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজিনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয়নি। সে কারণে আজ কতগুলো রোগী মারা গেল। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার বাবাকে হারালাম।
[৭] তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে অক্সিজেন নেই। রাত ৮টা অক্সিজেন আসছে। এই সময়ে এই রোগীগুলো কিভাবে
বাঁচবে।
[৮] শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের আসাদুল্লাহ বলেন, আমার বড় ভাই রবিউল ইসলাম পারভেজকে ভর্তি করেছিলাম। অক্সিজেন সংকটের কারণে গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে আমার ভাই মারা যায়।
[৯] কলারোয়া উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা ও রোগীর স্বজন গোলাম মোস্তাফা বলেন, আমার স্ত্রী সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি। সিসিইউ ওয়ার্ডে অক্সিজেন
বিপর্যয়ের কারণে ২জন মারা গেছে।
[১০] সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মানস কুমার মন্ডল বলেন, বিকেল থেকে হাসপাতালের সেন্টার অক্সিজেন সিস্টেমের প্রেসার কমে যায়। সকালে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। যশোর থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসা হয়েছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরপরই হাসপাতালেন সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্বাভাবিক হয়েছে।
[১১] সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন ডা. সাফায়ত বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ার কথা ছিলনা। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও ২০২টির অধিক সিলিন্ডার আছে। এখানে দায়িত্বশীলদের কোনো গাফিলতি ছিলো কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য বিভাগ।
[১২] সামেক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা জানান, বুধবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অক্সিজেনের প্রেসার কমে যায়। ফলে আইসিইউ’র মধ্যে ৪জন রোগী মারা যায়। অক্সিজেন ঠিক ছিল। অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি ছিল না। তবে কি কারণে অক্সিজেনের প্রেসার কমে গেল, তা তদন্তে মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মারুফ আহমেদ ও সামেক হাসপাতালের ডা. সাইফুল্লাহ। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
[১৩] জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির জানান, তত্বাধয়াককে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজন পড়লে জেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :