সুব্রত বিশ্বাস: মাঝেমধ্যে আজকের রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ি,ব্যক্তিসর্বস্ব রাজনীতি। আদর্শের বালাই নেই, সর্বত্র একই অবস্থা। বিভিন্ন দলে কোন্দল, আদর্শবিচ্যুতি। কে কখন কোন দলে রয়েছেন, তা বুঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের রাজনীতি সমাজের হানিকারক। বর্তমান সরকার একটা পরিরবর্তন আনার চেষ্টা করছে, এ বড় স্বস্তির কথা। আমি বিশ্বাস করি, দেশে আরেকটা পরিবর্তন আসবে। সে পরিবর্তন হবে খারাপ থেকে ভালোর দিকে। তা শুরুও হয়ে গিয়েছে। রাজনীতির ‘দুর্গন্ধময় পথ’ স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হবে বলে আমি নিশ্চিত বিশ্বাস করি। স্বাধীনতার পর একইভাবে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু আমরা দেখি, স্বাধীনতার স্বাদ সরকার গঠনের স্বাদ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন তারা। স্বাধীন বাংলাদেশে সঠিকভাবে প্রথম যে সরকার গঠিত হলো, আসলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি অংশের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করা। আর তা করতে গিয়ে নানা ধরনের ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। যতো দিন যাচ্ছিলো, ল্ণ্ঠুনের মানসিকতা ততো বাড়ছিলো। বর্তমান সময়ের রাজনীতি তারই ফসল। দেশের জন্য সর্বস্ব ত্যাগের রাজনীতি আজ ব্যক্তিস্বার্থে সীমিত। সমাজের সর্বস্তরে অনাচার, ভ্রষ্টাচারের দরুন বাংলাদেশকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যারাই রাজনীতি করেছেন, সকলের লক্ষ্য ছিলো দেশকে পাকিস্তানের শাসনমুক্ত করা। তা নিয়েই ছিলো আন্দোলন। সমস্ত আন্দোলনেরই বড়সড় প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে, পাকিস্তানকে দেশ ছাড়তে হয়। সেজন্য মানুষের কী প্রচেষ্টাই না ছিলো! প্রতিটি বাংলাদেশি আত্মোৎসর্গের মানসিকতায় তৈরি ছিলেন। অসংখ্য দেশকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন। দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবধারিত মৃত্যু হতে পারে তা জেনেও ভয় করেননি তারা। নির্ভীকচিত্তে দেশের জন্য এগিয়ে গিয়েছেন সবাই। ১৯৭১ সাল, দেশ বিভক্ত,পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে কোটি কোটি ছিন্নমূল মানুষ। মানুষের সে কী সীমাহীন কষ্ট! আজও ভাবলে মনকে পীড়া দেয়। হিংসার মনোভাব! ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করার মধ্যে যে চরম তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিলো।
দেশের প্রতি সংকল্পের আনুগত্যে শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাব ছিলো। এতোসবের জন্যই পাকিস্তানের কবল থেকে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার আগেকার রাজনীতির সঙ্গে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে শালীনতা ছিলো, আজ যা অনেকটাই নেই। বর্তমান রাজনীতির কথা বললেই ভ্রষ্টাচারের গন্ধ পাওয়া যায়। শালীনতার পাঠে বড় ধাক্কা লাগে ১৯৭৫ সালে, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে। তা প্রত্যাহারের পরই অবশ্য রাজনীতিতে পটপরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। সরকার গড়ে আওয়ামী লীগবিরোধী লোকজন। সে এক বিরাট পরিবর্তন। রাজনীতিতে কাজ করার জন্য তখনও কিছু মানুষ রয়ে গিয়েছেন। দেশমাতৃকার সেবার মানসিকতায় কাজ করতে উদ্যোগী তখনও কিছু মানুষ। আজও সে রাজনীতি স্বপ্ন। তবুও মনে হয়, দিনদিন পরিবেশের পরিবর্তন ঘটছে। ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করতে ব্যস্ত সবাই। দেশের মঙ্গলের কথা আর কেউ ভাবেন না। তাই রাজনীতির উপর সাধারণ মানুষের ভরসা আজ প্রায় নেই বললেই চলে। মানুষ যখন দেখেন, রাজনীতিবিদরা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ নন, শুধু স্বার্থচিন্তায় মগ্ন, তখন তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আর তখনই ভাবি, কী হচ্ছে এসব! নিঃস্বার্থ, পরোপকারের রাজনীতি কোথায় হারিয়ে গেল! লেখক: ব্যবসায়ী
আপনার মতামত লিখুন :