কামরুল হাসান মামুন: "উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশকে ১৯ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক" আজকের পত্রিকা
উচ্চশিক্ষা খাতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ এটাই প্রথম না আর এটাই শেষ হবে না। এর আগেও বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় Institutional Quality Assurance Cell. Institutional Quality Assurance Cell (IQAC) এবং Higher Education Quality Enhancement Project (HEQEP) নামে আরো প্রজেক্ট আজ প্রায় ১০ বছর যাবৎ চলছে। এই প্রজেক্টগুলো এক প্রকার হরিলুটের মত করে চলছে। টাকার এমন অপচয় আমি আর দেখিনি। এই প্রজেক্টগুলোর আগে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার হাল আর এই প্রজেক্টগুলো চালু হওয়ার পর বর্তমানে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার হালের তুলনা করলেই একদম স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে বিশ্বের কোন দেশের উন্নয়ন হয়েছে এইরকম উদাহরণ আমার জানা নেই। তারা বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য দরদে প্রচন্ড কষ্টিত এইটা ভাবার কোন কারণ নেই।
বিশ্ব ব্যাংকের এইসব প্রজেক্টের মাধ্যমে এই পর্যন্ত বিপুল টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই প্রজেক্টের সাথে যারাই যুক্ত হয়েছেন প্রচুর পারিশ্রমিক নিয়েছেন কিন্তু সেই পরিশ্রম কি আদৌ প্রয়োজনীয় ছিল কিনা সেটা সঠিকভাবে মনিটর করা হয়নি। গবেষণার জন্য অনেকেই বিপুল অংকের টাকা পেয়েছেন সেই টাকার সমানুপাতিক গবেষণা কি হয়েছে? গবেষণাপত্র হলেই হবে? কোথায় প্রকাশ হলো দেখতে হবে না? যন্ত্রপাতি কিনলেই হলো? ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে না? মিটিং এর পর মিটিং করে এনভেলপ মানি নেওয়া কোন নৈতিকতার মধ্যে পরে? আমার বিভাগে ওয়ার্কশপ করেছে। এর একটিতে আমি গিয়েছিলাম। কিছুক্ষন পরে দেখি এক কর্মচারী একটি খাতা আর এনভেলপ নিয়ে হাজির। উপস্থিত থাকার জন্য টাকা দিচ্ছে। কেন? আমি টাকা নিতে না চাইলে তৎকালীন বিভাগের চেয়ারম্যান টাকাটা নিতে অনুরোধ করলেন। আমি তবুও নেই নি। কারণ সেই ওয়ার্কশপে থাকতে পারাটা আমার জন্য লাভজনক হওয়ার কথা। ব্যক্তিগত লাভ হবে আমার আর তার জন্য উল্টো আমি টাকা পাব? অবিশ্বাস্য। তাছাড়া ওই ওয়ার্কশপে গিয়ে বুঝতে পেরেছি ওখানে থেকে আমার সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হয়নি। এইজন্যই বলি এইসব অপচয়।
এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক টাকা থাকলে সেই টাকা খরচের জন্য প্রায়োরিটি লিস্ট করলে । ছাত্রদের আবাসিক সুবিধা বাড়ানো বেশি দরকারি। পুরো ক্যাম্পাসের টয়লেট ফেসিলিটি বৃদ্ধি বেশি জরুরি। পুরো ক্যাম্পাসে কিছু মানসম্পন্ন ক্যাফেটেরিয়া তৈরী জরুরি। লাইব্রেরি সেন্ট্রাললি aircondition করা জরুরি। পুরো ক্যাম্পাসকে সুন্দর মনোরম করা জরুরি। বিদেশী মানসম্পন্ন পোস্ট-ডক নিয়োগ দিয়ে আন্তর্জাতিম মানসম্পন্ন পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা জরুরি। অথচ এইসব খাতে খরচ করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বিদেশী ১০০ পোস্ট-ডক নিয়োগ দেওয়া হয় ক্যাম্পাসের চেহারা পাল্টে যাবে। শিক্ষার্থীরা উজ্জীবিত হবে। এরা শ্রেণীকক্ষে ক্লাস পর্যন্ত নিতে পারতো। এইসবই শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের প্রাথমিক কাজ। এর ফলে শিক্ষা ও গবেষণার একটি আবহ সৃষ্টি হতো। এইসব না করে যা করা হয়েছে তা তেমন কোন ইমপ্যাক্ট ফেলেছে বলে মনে হয় না। ফেলেনি যে তার প্রধান প্রমান হলো বিশ্ব রেঙ্কিং-এ আমরা কেবল পিছিয়েই যাচ্ছি। এর চেয়ে বড় প্রমান আর কি হতে পারে?
লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়