নিউজ ডেস্ক: ব্লকচেইন এমন একটি প্রযুক্তি যাতে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নিরাপদে এবং এনক্রিপ্ট করে মজুত করা যায়। একবার লেনদেন সম্পন্ন হলে তার তথ্য যাতে বদলানো না যায়, তা নিশ্চিত করে ব্লকচেইন। ব্লকচেইন এক ধরনের তথ্যভান্ডার। অন্যভাবে বলা যায়, ব্লকচেইন লেনদেনের একটি ডিজিটাল লেজার/খাতা/রেকর্ড। প্রতিটি স্বতন্ত্র রেকর্ডকে বলা হয় ব্লক যা একটি তালিকায় একত্রে লিঙ্কযুক্ত থাকে যাকে বলা হয় চেইন।
ব্লকচেইনের প্রত্যেকটা ব্লক সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়। একবার চেইনে একটা ব্লক যোগ হয়ে গেলে সেটাতে কোনো প্রকারের পরিবর্তন অসম্ভব। ব্লকগুলো পাশাপাশি তাদের সৃষ্টির ক্রমানুসারে বসে। প্রত্যেকটা ব্লক তার আগে কোন ব্লক আছে সেটা জানে। এভাবে একটা ব্লকের সঙ্গে আরেকটা কানেক্টেড। ব্লকচেইন ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, অর্থাত্ সারা পৃথিবীতে বলতে গেলে একই ব্লকচেইনের সব ইউজার বা ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ইউজারদের কাছে একেবারে কার্বন কপি আছে। কাজেই একটা বা শ-খানেক সার্ভার বা কম্পিউটার একসঙ্গে নষ্ট হয়ে গেলেও ব্লকচেইনের কিছুই হবে না।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। রাইড শেয়ারিং থেকে শুরু করে আর্থিক খাত, ভূমি ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাক্ষেত্র পর্যন্ত এ প্রযুক্তির নানা সুফল পাওয়া সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির এ ক্ষেত্রটি এখন নানা দেশে গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় দেশ এগিয়ে যাবে।
ব্লকচেইন ব্যাংক খাতে প্রযুক্তিগত বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যাংকের যাবতীয় লেনদেন রেকর্ড করার জন্য সব শাখায় একটা বড় সাইজের খাতা থাকে। আর যে ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে, তাদের এই রেকর্ড থাকে ডেটাবেইজে। হয়তো, সেই পুরোনো খাতাতেও থাকে। এই বড় সাইজের খাতাটাকে বলে লেজার। তো একটা ভ্যালিড ট্রানজেকশানের জন্য অবশ্যই ব্যাংকের লেজারে সেটার এন্ট্রি থাকতে হবে। ব্লকচেইন এরকম একটা লেজার, যেখানে পাশাপাশি একটার পর একটা এরকম অনেকগুলো ব্লক থাকে। প্রত্যেকটা ব্লকের ভেতর থাকে একটা সময়ে মাঝে সারা পৃথিবীতে যত ট্রানজেকশান হয়েছে সেটার সব ডেটা। এই ডেটা ওপেন কিন্তু এনক্রিপ্টেড অর্থাত্ সবাই দেখতে পারবে এই ডেটা কিন্তু পড়তে গেলে প্রাইভেট কী লাগবে। অর্থাত্ আপনি যদি এখানে ট্রানজেকশন করে থাকেন, তাহলে শুধু আপনি এখান থেকে আপনার ট্রানজেকশানের সব তথ্য সেটার প্রাইভেট কী ব্যবহার করে পড়তে পারবেন, অন্য কেউই পারবে না। তবে মানুষ যেটা দেখবে তা হলো ট্রানজেকশানের পরিমাণ। তবে কার অর্থ কার কাছে গিয়েছে সেটা এভাবে জানা যাবে না। কেননা শুধু এড্রেস দিয়ে চলে যাবে টাকা। কোনো পরিচয় থাকবে না।
বাংলাদেশের এলসি এবং পেমেন্ট সুইফটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। একই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের এই যুগে ব্লকচেইন এলসি একটি বাস্তবতা। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এর উত্তরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই লেনদেনটি রিয়েল টাইম, ঝামেলামুক্ত, কাগজের ব্যবহারমুক্ত এবং একই সঙ্গে ব্যয় সাশ্রয়ী। এই সফল লেনদেনের ফলে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্যময় সার্ভিস প্রদানের জন্য ট্রেডে এ ধরনের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নিয়ে আসবে বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রানজেকশান ব্যাংকিং দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
ইত্তেফাক