আহসান হাবিব: এই পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী এবং উদ্ভিদ জগৎ, বিভিন্ন পরিবার, গণ এবং প্রজাতিতে বিভক্ত। প্রাণীবিদগণ এই জটিল শ্রেণিকরণের কাজে নিয়োজিত। এ বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। মানুষ হিসেবে নিশ্চয় আমরাও কোনো না কোনো শ্রেণিতে পড়ি। কী আমাদের পরিচয়? বিজ্ঞানীরা আমাদের নাম দিয়েছেন ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’। এখানে দুটি শব্দ রয়েছে,‘হোমো’ মানে ‘মানুষ’ আর ‘স্যাপিয়েন্স’ মানে ‘জ্ঞানী’ বা ‘বুদ্ধিমান’। এখানে হোমোকে ‘গণ’ এবং স্যাপিয়েন্সকে ‘প্রজাতি’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে আমাদের সঠিক শনাক্তের জন্য। অসংখ্য প্রজাতি নিয়ে একটি গণ হয়, আর অনেক গণ নিয়ে তৈরি হয় একটি ‘পরিবার’।
পরিবার>গণ>প্রজাতি। আমাদের পরিবারের নাম হচ্ছে ‘এপ’, এটা একটা বড় পরিবার। এর অধীনে আছে অনেক গণ এবং গণ এর অধীনে আছে অনেক প্রজাতি। প্রজাতি হিসেবে আর যা আছে সেগুলির দুএকটির নাম হচ্ছে, হোমো রুডলফেন্সিস, হোমো ইরেকটাস, হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস ইত্যাদি। এরা সবাই মানব। আড়াই থেকে তিন লক্ষ বছর আগে আমাদের মতো প্রাণীদের উদ্ভব। তারপর বিবর্তনের নানা পথ বেয়ে আজকের আমরা হয়ে উঠেছি। অন্যান্য প্রাণীদের মতই আমরা তুচ্ছই ছিলাম, বিবর্তনই আমাদের এইখানে নিয়ে এসেছে। অবশেষে আমরা হয়ে উঠেছি একটি ‘বুদ্ধিমান প্রাণী’। কিন্তু এই যে আমরা ‘এপ’ নামক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত তা আমরা ভুলে যাই কী করে? বিশেষ করে যখন আমরা এই পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম শুনি, আমাদের ‘আধুনিক’ মন মেনে নিতে চাইনা।
কেননা আমাদের পরিবারের সদস্যের নাম যে শিম্পাঞ্জী, গেরিলা, ওরাং ওটাং! যেন একজন দরিদ্র কৃষক পিতার শিক্ষিত সন্তান, বাবার পরিচয় দিতে কুণ্ঠিত! তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মানুষ অন্য প্রাণীদের এই বিভক্তিকরণ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করে না, শুধু নিজের বেলায় ‘ব্যক্তিত্বে’ আঘাত লাগে! কেনো আমরা আমাদের বংশধরদের নাম শুনলে নাক সিটকাই? কেনো এই সংকট? কে এই সংকটের মূল? ইতিহাস বলছে এই সংকটের মূলে রয়েছে ‘ধম’! কিন্তু আমরা যে কোনো কারণেই মানি আর না মানি আমরা ‘এপ’ নামক পরিবারেরই সন্তান, শিম্পাঞ্জী গরিলা ওরাং ওটাং আমাদের বংশধরগণ। লেখক : উপন্যাসিক