হাসান মোর্শেদ: বছর দুয়েক আগে প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে একজন বীরাঙ্গনার সাক্ষ্য নিতে গিয়েছি, তিনি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলারও সাক্ষী। অত্যন্ত ক্ষমতাবান ঘাতকপক্ষ বলে এ নিয়ে নিরাপত্তা হুমকিতে আছেন। ‘দাসপার্টির খোঁজে’ বইয়ের লেখক হিসেবে ওই এলাকায় আমারও নিরাপত্তার ঝুঁকি। জাতীয় পর্যায়ের একটা টিভি চ্যানেলের পরিচিত ঊর্ধ্বতনদের সহায়তায় ওই চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি আমার সঙ্গে যাচ্ছেন, মুলত নিরাপত্তার স্বার্থে।
পরিচিত টিভি চ্যানেলের একটা দাম আছে এখনো। সেই বীরাঙ্গনা অবিবাহিত ছিলেন, ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়েছিলেন। গর্ভের সন্তান নিয়ে যুদ্ধের পর এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, বাইরে বাইরে অনেক কষ্ট করে সেই সন্তানকে বড় করে বিয়ে দিয়েছেন। আমার মূল আগ্রহ ছিলো তার এই সংগ্রামটুকু, তার টিকে থাকা, তার ধর্ষণ পর্ব নয়। এই আলাপগুলো খুব সংবেদনশীল, এই অভিজ্ঞতা যিনি বর্ণনা করেন তার তো বটেই যিনি শুনেন তারও ট্রমা হয়, ট্রমার ভেতর দিয়ে অতীত যাত্রা ঘটতে থাকে। বিষয়টা সংবেদনের, প্রকাশের নয়।
আমাদের কথার মধ্যে সেই সাংবাদিক ভদ্রলোক, যার দায়িত্ব ছিলো মূলত আমার সঙ্গে থাকা। তিনি বীরাঙ্গনাকে বারবার প্রশ্ন করছিলেন ‘বাংকারে নেওয়ার পর কী হলো? কেমনে করলো? কয়জন মিলে করলো? আরেকটু ডিটেইলস’ শূন্য চোখে সেই বীরাঙ্গনা বলেছিলেন, ‘মেয়ে মানুষরে কেমনে করে, বাবা তুমি জানো না?’
চড় দিয়ে সেই হারামজাদার দাঁত ফেলে দেওয়ার ইচ্ছেটা বড় কষ্টে সামলেছিলাম। নায়িকা পরীমনির সংবাদ সম্মেলনে তার কাছে একজন আরও ‘ডিটেলস’ জানতে চাইলেন। পরী বললেন, ‘এরপর ডিটেলস মানে প্রথম কোথায় হাত দেওয়া হয়েছে, পরে কোথায় এসব জানতে চান? এর বাইরে আমার কাছে আর কোনো ডিটেলস নেই।’ সব মানুষের সঙ্গে অবশ্যই তবুও বিশেষ করে নারী ও শিশুর সঙ্গে কী আচরণ করতে হয় সেটা শিখে নেওয়া খুব জরুরি প্রতিটি প্রফেশনালের। এম্পেথি, সংবেদনশীলতা বলে কিছু ব্যাপার আছে। এগুলো নেই হয়ে গেলে আসলে আর কিছুই থাকে না।
ফেসবুক থেকে