জাফর ওয়াজেদ: জেলখানার বাইরে পরিচয়। জেলে দেখা হতো। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল তীব্র। পাকিস্তান গণপরিষদে দুজনে নির্বাচন করেছেন। বিপরীত দল করতেন। সরদার কমিউনিস্ট হলেও আন্তরিকতা গভীরতর ছিল। ষাট দশকে দুজনের দেখা কম হলেও খোঁজ থাকতো। বঙ্গবন্ধুর পাঠাগারের আলমারীতে সরদারের অনূদিত বিখ্যাত দুটি বই দেখেছিলাম ১৯৮৩সালে। ১৯৭০ সালে সরদার বাংলা একাডেমিতে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা তাকে উঠিয়ে নেয়। ক্যান্টনমেন্ট হয়ে কারাগারে। ১৬ ডিসেম্বর ছাড়া পান। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে সরদারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেন। তিনি যোগ দেনও। নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন।
ভাবীকালের গবেষকরা এসব নিয়ে লিখবেন নিশ্চয়। সরদারফজলুল করিম নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। ছাত্রাবস্থায় গড়া অভ্যাস শেষ জীবন পর্যন্ত ছিলো। মাঝে মাঝে তা ছাপতেনও। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের ওপর ওনার লেখাটি মাস্টারপিস। সরদার ফজলুল করিম ছিলেন সেই বাবা যিনি তার পুত্রর হাটবাজারটাও করে দিয়ে আসতেন। মগবাজারে থাকা পুত্র ও পুত্রবধূর সব খরচও বহন করতেন। শেষ বয়সে তাই তাকে নানান ধরনের কাজ করতে হয়েছে। বড়পুত্রটি অটিস্টিক। প্রায়শই পাগলামী করে।বিয়েথার পরও মাঝে মাঝে উন্মাদপ্রায়। বহু চিকিৎসা করান। নিজে থাকতেন পশ্চিমরাজাবাজার। পরে শ্যামলীতে বাড়ি বানিয়ে সেখানে উঠেন। বুড়ো বয়সে ছেলের তদারকিতে কেটে যেতো। স্ত্রী বিয়োগের পর আরও অসহায় হয়ে পড়েন। বুয়া নির্ভর জীবন।
৮০ দশকের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেবার পর যোগ দেন সংবাদে। কাজ দেওয়া হয় চিঠিপত্র দেখার। বংশালে সংবাদ অফিসে ওঠার সিঁড়িকোঠায় জঞ্জালের মাঝখানে বসতেন। ঘণ্টা দুই গরমের মধ্যে ফ্যান ছাড়া কাজ করতেন। দেখে আমার কস্ট হতো। স্যারকে বলি চিঠি বাড়ি নিয়ে কাটাছেঁড়া করার জন্য। অবশ্য তা করতেনও। বছর দেড়েক পর একটি কলেজে যোগ দেন। বড় কষ্টকর বড় কঠিন জীবন কাটিয়েছেন। রাষ্ট্র তার সেরা প্রতিভাবানকে সামান্য মর্যাদা দেয়নি কখনো। লেখক: মহাপরিচালক, পিআইবি। ফেসবুক থেকে