আহসান হাবিব: ‘দেশটা রসাতলে গেলো’ এমন কথা বলার মানুষ অজস্র, শুধু দেখলাম না কেউ কেন রসাতলে গিয়েও দেশটা টিকে আছে তার কারণ দেখিয়ে কিছু লিখতে। যদি কেউ কিছু লেখেও, তাদের লেখায় নিজেদের মতের চাইতে কোনো দার্শনিক বা সমাজবিজ্ঞানী কখন কী বলেছেন তার রেফারেন্সে ভরে ফেলেন। সমাজ বা রাষ্ট্রকে নিজস্ব আদর্শে দেখতে চাওয়া মানুষের একটা মৌলিক বিষয় কিন্তু কীভাবে তা এই পচে যাওয়া সমাজ থেকে উন্নত সেই সমাজে পৌঁছানো যায়, তার সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই। প্রায় সকলেই মুখস্থ কথা বলে।
এই দেশে একজন মার্ক্সবাদী কথা বলে যে যান্ত্রিকভাবে, একজন মোল্লাও একই ভঙ্গিতে বলে। তারা উভয়েই দাবি করে তাদের আদর্শিক সমাজ সবচেয়ে উন্নত। মাঝখান থেকে সমাজ তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলে এবং তার থাকে একটা সুনির্দিষ্ট উৎপাদন ব্যবস্থা। আজকের এই উৎপাদন ব্যবস্থায় আসতে তাকেও পাড়ি দিতে হয়েছে যুক্তিশীল পথ। একটি সমাজ বদলে যায় কেন? কারণ বদলে যাওয়ার উপাদান তার ভেতরেই প্রতিনিয়ত তৈরি হয় নিয়ম মেনেই। মানুষ ইচ্ছানিরপেক্ষ সেই নিয়মের অনুগামী হয় এবং তাকে গতিও দেয় নিয়ম মেনে।
এখন আমাদের দরকার সমাজের ভেতরে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বগুলির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং তার মিমাংসার জন্য উপযুক্ত কর্মকৌশল। আর কারা এই দ্বন্দ্বগুলি মিটিয়ে ফেলার জন্য সঠিক শক্তি তাদের সংগঠিত করা। শুধু সংগঠিত করলেই হবে না, তাদের হতে রাজনৈতিক ভাবে প্রশিক্ষিত। এই কাজটি করতে দেখি না। শুধু দেখি চারদিকে হাহাকার এবং সেই অমিয় বাণী দেশটা রসাতলে গেলো। লেখক: উপন্যাসিক