রাজিয়া সুলতানা জেনি: কিছুদিন আগে আসা ‘সাদের কান এন্ট্রি’ নিউজটা নিয়ে অনেকে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল। অনেকে আবার দেখলাম, হাবে ভাবে বোঝাতে চাইছেন, তিনি যেহেতু এদেশের দর্শকদের নিজের সিনেমা দেখাতে চান না, তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনা করব না। আমাদের যখন পাত্তা দেয় না, আমরা পাত্তা দেবো না, বলে গাল ফোলাচ্ছেন। নো প্রবলেম, আপনার গাল, আপনি ফোলাবেন, কার কী বলার আছে। আমি অবশ্য সর্বভুক। ইউটিউবে হোক আর টরেন্ট থেকে নামিয়েই হোক, ভালো সিনেমা হলেই দেখে ফেলি। আমার জন্য বানানো, না কানের জন্য, এনিয়ে বিশেষ চিন্তা করি না।
সো, বঙ্গ অ্যাপ নামিয়ে দেখে ফেললাম 'লাইভ ফ্রম ঢাকা’। ২০১০ সালের শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশ এর পরের কাহিনী। শেয়ার মার্কেট কেন্দ্রিক না। সেই ক্র্যাশে বেশ বড় রকমের লস হওয়া এক যুবকের গল্প। সন্দেহবাতিক, রগচটা এই যুবকের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার যুদ্ধ নিয়েই এগিয়ে গেছে গল্প। খারাপ লাগেনি। সিনেম্যাটিক লেগেছে। ডায়ালগ এবং পাল্টা ডায়ালগের রেডিও নাটক ছিল না। তবে বেশ খসখসে ছিল। জানিনা এটাই পারিচালকের চাওয়া ছিল কি না। সিনেমাটা দেখতে গিয়ে অন্য একটা সিনেমার কথা বারবার মনে পড়ছিল, শেখ নিয়ামত আলীর, ‘দহন’। সেটাও ছিল এক বেকার যুবকের রোজনামচা টাইপ। ওটাতেও এই খসখসে ভাবটা অনুভব করেছিলাম।
এনিওয়ে, সাদ সম্পর্কে যে কয়টা কথা বলা হচ্ছে, তিনি এদেশের দর্শকের জন্য সিনেমা বানান না, বানান আন্তর্জাতিক অডিয়েন্সের জন্য, সেটাকে আসলে দুভাবেই নেয়া যায়। অ্যাপ্রিসিয়েশানও বলা যায় আবার নিন্দাও। হোয়াটেভার, আমার ধারণা, এই সিনেমা খুব বেশি দর্শক টানবে না। খুব নির্দিষ্ট কিছু দর্শকই এই সিনেমা দেখবে। আমার প্রত্যাশা শুধু একটাই, এধরনের সিনেমা দেখার দর্শক বাড়ুক। দেখা যাক, রেহানা মরিয়ম নূর, এদেশে রিলিজ হলে, দর্শকরা সেটা কিভাবে গ্রহণ করে। বেস্ট উইশেস ফর দ্যা ফিল্ম।
দ্বিতীয় যে সিনেমাটা দেখলাম, সেটা দেখলাম ইউটিউব থেকে। শিহাব শাহিন পরিচালিত, ছুঁয়ে দিলে মন। এই সিনেমাটা দেখলাম মুলতঃ টিভি নাটকের পরিচালক, সিনেমা বানাতে এসে কেমন পারফর্ম করেন সেটা দেখার জন্য। ফারুকীর পার্ফম্যান্স দেখেছি। সো, খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। যা ছিল, তা হচ্ছে, ঠিক কোণ লাইন ধরেছেন উনি, সেটা বোঝা। সিনেমা শুরুর মিনিট দশেকের মধ্যে বুঝে গেলাম, তিনি রাবণ হতেই লঙ্কায় এসেছেন। নো প্রবলেম। অপেক্ষায় থাকলাম, কতোটা রাবণ হতে পেরেছেন, সেটা দেখার জন্য।
গ্রাম্য পটভূমিকায় কাহিনী শুরু হলেও, ডায়ালগে বলা হচ্ছিল, হৃদয়পুর একটা শহর। যাই হোক, আলী রাজের চিৎকার করে ডায়ালগ ডেলিভারি দেখে মনে হচ্ছিল, টিপিক্যাল বাংলা সিনেমাই আছে কপালে। বেশ ধীরে আগাচ্ছিল কাহিনী। ডায়ালগে উনাকে ফারুকি ঘরানার মনে হল, ‘করসে, খাইসে’ টাইপ ডায়ালগ ঢুকিয়ে দেয়ার প্রবণতা আছে। আবোল তাবোল ঘটনা দিয়ে লম্বা করার চেষ্টা চলল বেশ কিছুক্ষণ। দেন কেম দ্যা টুইস্ট। দারুণ একটা পয়েন্টে এলো বিরতি। ইট ওয়াজ ব্রিলিয়ান্ট। বাংলা সিনেমায় সচরাচর না দেখতে পাওয়া একটা সিচুয়েশান।
কিন্তু সেটাই শেষ। এরপরে পুরো সিনেমায়, বলার মত আর তেমন কোন পজিটিভ কিছু পেলাম না। অন্ততঃ কাহিনীতে। টিভি নাটক লাগেনি, ভিজুয়ালের ব্যাবহার ছিল। গানগুলো সুন্দর। আর বলার মত ব্যাপার ছিল ইরেশ জাকেরের অভিনয়। রিয়েলি ইম্প্রেসড। বাকিদের ভেতরে, আলী রাজ অভিনয় ভালো করলেও, চিৎকার না করে কথা বললে আরও ভালো লাগতো। মম ওয়াজ সিমপ্লি অ্যা ডিজাস্টার। উনার এতো বিচ্ছিরি অভিনয় সত্যিই হতাশাজনক। এন্ডিং এ মিল হবে বোঝাই যাচ্ছিল, তারপরও সেখানে কিছু নতুনত্ব আশা করছিলাম, পাইনি। সিনেমায় অনেক কিছুর ব্যাখ্যাই অনুপস্থিত। ওভারঅল, টিপিক্যাল বাংলা সিনেমার ভদ্র ভার্সান বলা যায়। ভালগার সিন, বা ডাবল মিনিং ডায়ালগ বিহীন একটা মিউজিক্যাল প্রেমের গল্প। আর সেখানেই ফুলস্টপ। এর বেশি কিছু নেই।