মোঃ ইউসুফ মিয়া : [২] রাজবাড়ী দৌলতদিয়া পাটুরিয়ার যাতায়াতের জন্য হলো নৌরুট দিয়ে ফেরীতে যানবাহন পারাপার সেই ফেরী এসে ভীড়বে ফেরীঘাটে কিন্তু নদীর ভাঙনের মুখে ফেরীঘাট জীবনের ঝুকি নিয়ে যানবাহন চলাচল।
[৩] দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার নামে পরিচিত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট।
[৪] এই নৌরুটের রাজবাড়ী প্রান্তে রয়েছে দৌলতদিয়া ঘাট ও মানিকগঞ্জ প্রান্তে রয়েছে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুম এলেই রাজবাড়ী দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী ভাঙন দেখা যায়। এতে করে যেমন ফেরি ঘাটের জায়গা কমে যাচ্ছে তেমনি ভাবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের মানচিত্র ছোট হতে শুরু করেছে।এছাড়াও ফসলি জমি,বসটভিটাও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
[৫] প্রতিবছরেই বর্ষা মৌসুম না আসতেই পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দৌলতদিয়াঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে দৌলতদিয়া প্রান্তের নবনির্মিত ৭নাম্বার ফেরী ঘাট। এতে করে ৭নাম্বার ফেরিঘাটের আশেপাশের এলাকার অর্ধশতাধিক পাকাবাড়ীঘর ও দোকানপাট ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এবং বসতবাড়ীর লোক জন আতংকের মধ্যে বসবাস করছে।
[৬] শনিবার দৌলতদিয়ার বিভিন্নস্থানের এলাকার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে দৌলতদিয়া ৭নাম্বার ফেরিঘাট এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যগ ফেলছে বিআইডব্লিউটিএ। গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে এসব এলাকার জিও ব্যগ ধসে পাড়েছে। এছাড়াও নবনির্মিত ৭ নাম্বার ফেরিঘাটের নতুন সংযোগ সড়কে পানি উঠে যাতায়তের খুব কষ্ট হচ্ছে। এতে করে ঝুঁকি নিয়েই যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠা নামা করতে দেখা গেছে।
[৭] বিগত কয়েকবছর ধরে পদ্মানদীর এই ভয়াবহ ভাঙনের ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ঘাটের সিমানা। এ বছর শুরুতেই প্রবল বৃষ্টির শুরুতেই পদ্মানদীর পানি বৃদ্ধির ফলে এলাকাজুড়ে সেই এলাকার প্রায় ১শত মিটার নদীর তীর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধ ও ফেরি ঘাট রক্ষায় ওই এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো পদক্ষেপের এখন পর্যন্ত চোখে পরেনি।
[৮] বিভিন্ন জায়গায় খোজ নিয়ে জানা গেছে যে, প্রতিবছর ন্যায় এই ঘাট রক্ষার্থে কোটি কোটি টাকার কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি)। এবার ভাঙন রোধে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ২০/২২ হাজার বস্তা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলবে বিআইডব্লিউটিএ। এই কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
[৯] দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফেরি ঘাটের নদী তীরবর্তী বসবাসকারী একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,কতৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই ঘাট এলাকায় প্রতিবছর এই পদ্মানদীর ভাঙন। শুকনা মৌসুমে যদি বালু ভর্তি জিও ব্যগের কাজগুলো শুরু করতো তাহলে কাজের দির্ঘমেয়াদী বা টেকসই হতো এবং বর্ষা মৌনুমের আগেই যদি বালু ফেলানো যেতো তাহলে পদ্মানদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হতো। তবে এলাকাবাসির দাবি এই পদ্মানদী ভাঙনে প্রতিরোধে কতৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের মানচিত্রের মধ্যে থেকে দৌলতদিয়া ঘাটটি খুজে পাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে পড়বে।
[১০] দৌলতদিয়ার ৭ নাম্বার ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা সবুজ মিয়া জানায়, পদ্মানদীর ভাঙনে এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার ইতিমধ্যে সবতবাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে চলেগেছে। এছাড়াও অর্ধশত পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ওই এলাকার কৃষি জমিসহ রাস্তাঘাট নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধে পদ্মনদীর ভাঙনে প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম পদ্মানদীর পেটে চলে যাবে।
[১১] ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দ দুলাল মন্ডল বলেন, নদী ভাঙনে কয়েকবার তাদের বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । এবার ভাঙলে আর আমাদের যাওয়ার জায়গা নাই। গত বছর বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে কিন্তু এ বছরে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
[১২] পাটুরিয়া বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নিজাম উদ্দিন পাঠান জানায়, দৌলতদিয়া ঘাটের ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ বস্তা ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। এ বছরে দৌলদিয়া ঘাট এলাকায় প্রায় ২২ হাজার জিও ব্যাগ নদীতে ফেলবে।
[১৩] দৌলতদিয়া ঘাট শাখার (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহা ব্যবস্থাপক(এ,জি,এম) ফিরোজ শেখ বলেন, বিআইডব্লিউটিএর পদ্মানদীতে ড্রেজিং কাজ করার পরপরই ৭নাম্বার ফেরি ঘাট ভাঙনের কবলে পরতে শুরু করে। তখনই নদী ভাঙনের রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ।
[১৪] গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা মুন্সী বলেন,পদ্মানদীর ভঙনের জন্য সব সময় গাড়ী যাতাতের খুব অসুবিদা হয় এ জন্যই খুব দ্রুত সময়ের মধে নদীশাসনের কাজ শুরু করতে না পারলে এবারও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে দৌলতদিয়ার ফেরীঘাট। বর্তমানে পদ্মানদীতে পানি কিঠুটা বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানেই ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে ।এতে করে দৌলতদিয়া এলাকার মানুষের অনেক ক্ষয় ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষ দ্রুতই সময়ের মধে পদ্মনদীর ভঙনের ব্যাবস্থা গ্রহন করা উতিৎ।
আপনার মতামত লিখুন :