শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২১, ০৪:০১ দুপুর
আপডেট : ১১ জুন, ২০২১, ০৪:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কামরুল হাসান মামুন: ভালো বেতনে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিন, তারপর সুন্দর অবকাঠামো নির্মাণ, তাহলেই সব র‌্যাঙ্কিং এ উন্নতি হবে

কামরুল হাসান মামুন: বিশ্বের বসবাসযোগ্য ১৪০টি শহরের ranking প্রকাশিত হয়েছে। সেই রেঙ্কিং ঢাকার অবস্থান ১৩৭। এর আগে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি রেঙ্কিং প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও রেঙ্কিং এর শেষদিকে। শুধুই কি বিশ্ববিদ্যালয়? ঢাকা শহরের স্কুল কলেজের মানও দিনদিন নেমে যাচ্ছে। এক সময় ঢাকা কলেজের যেই নাম ডাক ছিল সেটা আজ আর নেই। একটি বসবাসযোগ্য ঢাকা তথা বাংলাদেশ বানাবে কারা? এই শহর তথা এই দেশেরই মানুষ। সুন্দর একটি শহর চাইলে সেই শহরে সৎ শিক্ষিত ও সুন্দর মনের মানুষ দরকার। সেই সোনার মানুষ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরী করছে না সেটাতো বোঝাই যাচ্ছে। বাংলাদেশের নেতৃত্ব (প্রশাসন কিংবা সরকার) যারা দিচ্ছে তাদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। একবার ভাবুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের হতো ঢাকা কি এইরকম বসবাসের অযোগ্য হতো। এক শ্রেণীর মানুষ এই শহরে বড় পড়াশুনা করে এই শহরে বড় হয়ে এই শহরকেই নস্ট করে পরিবার নিয়ে এবং একই সাথে অর্থ পাচার করে বিদেশ চলে যাচ্ছে।

ঢাকার একটি প্রাইভেট স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুলে ঢুকে মনে হচ্ছিল ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুল শুধু না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো এমনি হওয়ার কথা। দেখে মনে হচ্ছিল ঢাকা বিমানবন্দরের টয়লেটের ছবি। ইন ফ্যাক্ট, আমার মনে হচ্ছিল বিমানবন্দরের টয়লেটের চেয়ে ভালো। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা। একটি প্রতিষ্ঠানের টয়লেট কেমন সেটা দিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের চেনা যায়। আমার মেয়েরা যেই স্কুলে পড়েছে সেগুলো মোটামোটি ভালো মানের প্রাইভেট স্কুল। আমি খুব বেশি দামি স্কুলে পড়াইনি কারণ আমি চেয়েছিলাম স্কুলের বন্ধুরা যেন মধ্যবিত্তের হয়। সেই স্কুলের টয়লেট নিয়েও আমার মেয়েরা কমপ্লেইন করত। সহজে স্কুলের টয়লেট ব্যবহার করত না। বিদেশে যতদিন ছিলাম খুব খেয়াল করে লক্ষ করেছি একেকটি স্কুল কত বড়, কত সুন্দর! জিমনাসিয়াম, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সব ঝকঝক করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জণ হল নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত নেই। বাহির থেকে কার্জণ হল দেখতে কত সুন্দর। কর্মসূত্রে কার্জণ হলে থাকতে পারা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। অথচ সেই কার্জণ হলে নাই কোন ভালো টয়লেট। যতটুকু আছে সেটাও পর্যাপ্ত না। ছাত্রদের জন্যতো আরো না। এমন কি শিক্ষকদের জন্য যা আছে সেখানেও আমার বিদেশী কোন অতিথি এলে নিয়ে যেতে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোও পুরোনো। বরং কার্জণ হলের ভবন থেকে অনেক অনেক বেশি পুরোনো। বাহির থেকে দেখে যতটা পুরোনো মনে হয় ভেতরে গেলে ততটাই নতুনের মত। কারণ এদের দেখভাল করা হয়। যত্ন নেওয়া হয়। আর ছাত্রদের টয়লেট, শিক্ষকদের টয়লেট, ভিআইপি টয়লেট বলে আলাদা কিছু নাই। সবই একই রকম। এটাই হলো সভ্যতার চিহ্ন।

গ্রামগঞ্জের কথা বাদ দিলাম ঢাকা শহরের প্রাইমারী স্কুল কি কেউ কখনো দেখেছেন? সরকারি প্রাইমারি স্কুল খোদ রাজধানীতে। এই স্কুলগুলোর কিন্তু নিজস্ব জায়গা আছে। কিন্তু সেই জায়গায় স্কুলের জন্য যেই স্ট্রাকচারটি আছে সেটির নকশা দেখেছেন কখনো? মানে ধরেই নেওয়া হয়েছে এইসব স্কুলে গরীবে পোলাপান পড়বে। আর গরিবের সন্তানরা আবার মানুষ নাকি? নাহলে বাচ্চাদের স্কুল ভবন এত কদাকার কুৎসিত হয় কি করে। অথচ আমরা যদি ঢাকা শহরের সকল প্রাইমারি স্কুলগুলোকে অত্যাধুনিক স্থাপত্যে দৃষ্টিনন্দন এবং ফাঙ্কশনাল করে সেখানে ভালো বেতনে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে যে যেই এলাকার তাদেরকে সেই এলাকার স্কুলে পড়তে বাধ্য করতে পারতাম তাহলে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম কমত। আর অন্যান্য সুবিধার কথাতো বলে শেষ করা যাবে না। জাপানে ঠিক এটাই করে। জাপানের বাচ্চাদের এই স্কুলেই যাদব কায়দা, সিভিক সেন্স এবং রেসপনসিবিলিটি ইত্যাদি শেখানো হয়। এই বয়সে শেখালে সেটা একদম গেঁথে যায়।

শিক্ষায় যদি জিডিপির মাত্র ২% থেকে ২.৩% বরাদ্দ দেয় তাহলে কি আশা করতে পারি? অথচ ইউনেস্কো বলে একটা সভ্য দেশ গর্তে চাইলে শিক্ষায় জিডিপির ন্যূনতম ৬% বরাদ্দ দিতে হবে। বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বললে বলা হয় কোথায় খরচ করবে? আমাদের করার এত কিছু থাকতে যদি বলি কোথায় খরচ করব কিসে করব? তাহলে শুনুন। প্রথমে ভালো বেতনে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিন। তারপর সুন্দর অবকাঠামো নির্মাণ এবং maintenance-এ করুন। দেখবেন ঢাকা শহর তথা দেশের চেহারা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।

লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়