কাকন রেজা: ফ্যাসিজমের বড় অস্ত্র হলো ভয়। আজকে যখন কাগজ পড়ছিলাম তখন এমন ভয়ের একটি খবর দৃষ্টি কাড়লো। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম-এর নির্দেশে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই হত্যার দৃশ্য দেখতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে বাধ্য করা হয়েছে। সেই পরিবারের মধ্যে ছিলেন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। মৃত্যু দৃশ্য দেখার পর নিহতের স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে যান। তার ছেলে মেয়েকে বলা হয় নিঃশব্দে কাঁদতে। কতোটা পাষণ্ড হলে এমন আদেশ দিতে পারে একজন মানুষ। ফ্যাসিজম কতোটা চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে এমনটা ঘটতে পারে।
যাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে তার নাম লি। তার অপরাধ তিনি গোপনে দক্ষিণ কোরিয়া সিনেমা ও গানের সিডি বিক্রি করছিলেন। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনে’র কাছে এটা ছিলো রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সমাজবিরোধী কর্ম। এ জন্য প্রকাশ্যে কয়েকশ মানুষের সামনে লি’কে গুলি করে হত্যা করা হয়। লি’র স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে সামনের সারিতে বসে হত্যা দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে বাধ্য করা হয়। অনেকে বলবেন, সিনেমা ও গানের সিডি বিক্রি অপরাধ হয় কীভাবে! ফ্যাসিজমে সব হয়। ফ্যাসিস্টদের দরকার অজুহাত। যার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা ও চাওয়ার বিরোধিতাকারীদের শায়েস্তা করা যায়। ফ্যাসিস্টদের টিকে থাকার প্রধান অস্ত্র ভয়। এই যে লি হত্যাকাণ্ড, এটাও সেই ভয় সৃষ্টি করার কারণেই। যাতে অন্যরা সাবধান হয়ে যায় কিম’র বিরুদ্ধে গেলে পরিণতির কথা ভেবে।
ফ্যাসিজম নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি রাষ্ট্রতেই একই অবস্থা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা থাকে জনগণের ওপর। আর ফ্যাসিজমের আস্থা হলো ভয়ের ওপর। জনগণের আস্থা হারানোরা ক্ষমতার মোহে এবং লোভে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে। কায়েম হয় ফ্যাসিবাদ। জোর করে ভয় দেখিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা। দেখুন তো ইতিহাস কী বলে, এমন চেষ্টা সফল হয় কি?
ফ্যাসিজম হলো বাঘ ও ছাগলের ওই গল্পের মতন। বাঘ নদীতে পানি খেতে গেলো, এ সময় একটা ছাগলও পানি খাচ্ছিলো। বাঘের ইচ্ছে হলো ছাগলটাকে খাবার। তাই সে ছাগলের সাথে ঝগড়ার অজুহাত খুঁজছিলো। ছাগলকে বললো, তুই পানি ঘোলা করলি কেন? ছাগল উত্তরে বললো, কই পানিতো পরিষ্কার, আমি ঘোলা করিনি। বাঘ বললো, তুই ঘোলা না করলেও তোর বাপ-দাদারা করেছে। অতএব তাদের অপকর্মের দায় তোর নিতে হবে। এরপর বাঘ কর্তৃক ছাগল নিধন এবং ভোজন। এই হয় ফ্যাসিজমে। পরিষ্কার পানিকে ঘোলা করা হয়, তারপর ছাগল নিধন করা হয়। লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক