হাদিউল হৃদয়: মার! মার! ধর! ধর! গুলি কর! গুলি কর! গ্রেনেড মার! তাড়াতাড়ি গুলি কর! মাইরা ফালা! এ ধরনের কথাবার্তা এখন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিভিন্ন বাজারে, ফাঁকা জায়গায়, রাস্তায় ও অলিতে-গলিতে। দলবেঁধে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়েছে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমসের প্রেমে। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই অলস সময় কাটাতে শিক্ষার্থীরা মোবাইলে ভিডিও গেমসের প্রতি আসক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ফ্রি ফায়ার গেমস খেলতে ডাইমন কিনতে হয়। ১০০ ডাইমনের দাম ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১০৬০ ডাইমনের দাম ৭৯০ টাকা পর্যন্ত। মেম্বারশিফট সপ্তাহে ১৭০ টাকা, মাসিক ৫১০ টাকা। এছাড়াও প্রতিটা ইভেন্টে ৪০০, ৫০০ টাকা খরচ না করলে যেনো হয়ই না। গেমটিতে প্রথমে কোনো খরচ ছিল না, কিন্তু পুরোপুরি ভাবে মনোযোগ হলে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো না কিনলেই নয়। যেমন, অলকের দাম ৪০০ টাকা, একটা প্লিয়ারে জারছি ৩০০ টাকা, নতুন ইভেন্ট আসলেই ২০০০ এর নিচে যাই না। সম্পূর্ণ ড্রেস কিনতে লাগে ১২০০ টাকা আর রেগুলার ইভেন্টের কথা তো বাদই থাকে।
রহিম নামে একজন হাই স্কুলের ছাত্র বলেন, গেমস সম্পর্কে কিছু জানতাম না। এখন নিয়মিত ফ্রি ফায়ার গেমস খেলার নেশা হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে নেট সমস্যায় এ গেমস খেলতে না পারলে মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলার ইচ্ছা হয়। ফ্রি ফায়ার গেমস যে একবার খেলবে সে আর ছাড়তে পারবে না।
ফ্রি ফায়ার গেমসকে যেকোনো নেশার চেয়ে ভয়ঙ্কর বলে উল্লেখ করেছেন তাড়াশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি দাবী করেন, এই সমস্যা থেকে আমাদের সন্তান, ভাই-বোনদের বাঁচাতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তরুণ কবি-সংগঠক হাদিউল হৃদয় বলেন, তাড়াশে শিল্প-সাংস্কৃতি চর্চ্চা না থাকায় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে গেমস খেলার প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করেছে। গ্রাম্যপাঠাগার থাকলেও বই পড়া ছেড়ে অনেক শিক্ষার্থীই খেলছে মোবাইল গেমস। এতে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে। অন্যদিকে বিভিন্ন গ্রামে খেলার মাঠ না থাকায় খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। শিক্ষার্থীদের মা-বাবাসহ সমাজের সবারই খেয়াল রাখতে হবে, যেন তারা মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার না করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে এসব গেম খেলা হয়। এতে চোখের কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়। ইদানিং অনেক শিক্ষার্থীকে চোখের রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসতে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন না দিলে তারা চোখসহ নানা রোগ থেকে অনেকটাই রেহাই পাবেন। সম্পাদনা : সাদেক আলী
আপনার মতামত লিখুন :