রাশিদ রিয়াজ : ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রস্তাব দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন মার্কিন নাগরিকদের জন্য সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। উচ্চাভিলাষী এই বাজেট প্রস্তাবে ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও তা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যয়ভার ও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩১ সালে ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১১৭ শতাংশে পৌঁছে যাবে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অবস্থাকে ছাড়িয়ে যাবে। একই বছর মার্কিন বাজেটের মোট ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ৮.২ ট্রিলিয়ন ডলার। শুক্রবার বিকেলে কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও সম্প্রসারিত কর্মসূচির বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানিয়ে বাইডেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে এ বাজেটে। নিউ ইয়র্ক টাইমস/স্পুটনিক
প্রস্তাবিত মার্কিন বাজেটে সামরিক ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ এবং আগামী বছর এ খাতে ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবে রিপাবলিকানরা এক ‘অপর্যাপ্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। বাইডেনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে, যাকে রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ‘অত্যন্ত ব্যয়বহুল’ বলছেন।
বাজেট পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত করপোরেশন, পুঁজি ও আয়ের ওপর কর বৃদ্ধি থেকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আদায় হবে বলে আশা করছে বাইডেন প্রশাসন। সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিবছর বাজেট প্রস্তাব ঘাটতিতে ছিল এবং ট্রাম্পের শাসনামলের শেষ বছর এ ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ৪.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। বাইডেন নতুন বাজেটে পেন্টাগন ও অন্যান্য সরকারি বিভাগ পরিচালনের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন দেড় ট্রিলিয়ন ডলার। রাখা হয়েছে ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের কর্মসংস্থান ও ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের পারিবারিক কর্মসূচি পরিকল্পনা। অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াও সামাজিক সুরক্ষাখাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেটে মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রা অর্থনৈতিকভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আন্তর্জাতিক বিশে^ প্রতিযোগিতায় মার্কিন পণ্য প্রতিযোগিতায় আরো এগিয়ে যেতে পারে সে জন্যে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হলেও ২০২২ সালে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৩শ বিলিয়ন ডলার।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন বলেছেন মার্কিন নেতৃত্বকে পুনরুজ্জীবিত করে কোভিড মোকাবেলা ও চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্তির অবস্থানে আমাদের টিকে থাকতে হবে। একই সঙ্গে ইরানকে মোকাবেলা ও ইউরোপ ও ইউরেশিয়ায় রাশিয়া ও চীনের প্রভাব হ্রাসের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন ব্লিনকেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। এসব ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। বাজেট প্রস্তাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ৬৬৫.৮ মিলিয়ন ডলার বিশেষভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ইউরোপ এবং ইউরেশিয়ার ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব হ্রাস ও ইউরো-আটলান্টিক একীকরণকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, লিঙ্গ সমতা রক্ষা, দুর্নীতি রোধ ও মানবাধিকারকে আরো সমুন্নত করতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাশিয়ার প্রভাব ও আগ্রাসন রুখতে আরো ৩শ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ন্যাটো এবং অন্যান্য পশ্চিমা বাহিনীর সাথে আন্তঃযোগিতা বৃদ্ধির জন্যে প্রস্তাবটিতে অর্থ, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা ও নজরদারি করার জন্য এ অর্থ বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেইন, জর্জিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়ায় বরাদ্দ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়ে বলা হয়েছে সংস্কার দেশটিতে দুর্নীতি রোধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। চীনের প্রভাব রুখতে প্রস্তাবিত বাজেটে কমবেশি ১৫৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রচার কার্যক্রমের জন্য ৮শ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে বলা হয়েছে এ ব্যয় ইরান, চীন এবং রাশিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকা এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে লক্ষ্য করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ অর্থ মিয়ানমার, বেলারুশ, হংকং, ভেনিজুয়েলা এবং কিউবার রাজনৈতিক ও মানবিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে সামাল দিতে ব্যবহৃত হবে।
প্রস্তাবিত মার্কিন বাজেটে হাইপারসনিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন, পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে আধুনিকীকরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যুদ্ধের সক্ষমতা বিকাশে নজর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে অতীতে যেমন প্রতিরক্ষা খাতে তহবিল সরবরাহ করা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষায় শীর্ষ স্তর বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন, নতুন সাবমেরিন ও দূরপাল্লার বোমারু বিমান তৈরির জন্যে ২৭.৭ বিলিয়ন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্যে ২০.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। হাইপারসনিক অস্ত্রের জন্যে গত বছরের বরাদ্দের চেয়ে ৫২ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি রেখে এবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৮ মিলিয়ন ডলার। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিরোধ প্রচেষ্টার জন্যে ৫.১ বিলিয়ন বরাদ্দ ছাড়াও সামারিক বাহিনীর বেতন বৃদ্দি করা হয়েছে ২.৭ শতাংশ।
যে কোনো সংক্রমণ ব্যধি প্রতিরোধে বাজেটে প্রস্তাব রাখা হয়েছে ১.৪ বিলিয়ন ডলার। ইতিমধ্যে ৬৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক অন্তত এক ডোজ কোভিড টিকা নিয়েছেন। এছাড়া সড়ক ও সেতু মেরামতের জন্যে ১৭ বিলিয়ন, হাইস্পিড ব্রডব্যান্ডের জন্যে ১৩ ও সীসার মিশ্রিত পানির পাইপ পরিবর্তনে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিক্ষাখাতে প্রাথমিক শিক্ষকদের ঘন্টায় ১৫ ডলার বেতন নিশ্চিত করতে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার, সাশ্রয়ী মূল্যের শিশু যত্নের জন্য প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন ডলার ও ছুটি অনুপস্থিতির জন্যে সাড়ে ৭শ মিলিয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শালন্দা ইয়ং সাংবাদিকদের বলেছেন প্রস্তাবিত বাজেটটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিস্তৃত অংশীদারিত্বের সমৃদ্ধির একটি এজেন্ডা। এটি এখন এবং কয়েক দশক ধরে মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।