জহিরুল ইসলাম: [২] পূর্ণিমা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের উপকূলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। রামগতির উপজেলা চরগাজী ও চর আবদুল্লাহ এবং কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, চরমার্টিন, নাসিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ, কালকিনিসহ মেঘনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ২০টি কাঁচা ও পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে।
[৩] মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই তিনদিন মেঘনার ঢেউয়ের আঘাতে কমলনগরের নাসিরগঞ্জ বাজার এলাকার প্রায় ৬০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। পার্শ্ববর্তী একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল থেকে জোয়ারে অন্তত ১২ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কয়েকশ পরিবার।
[৪] এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মেঘনা উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার চেষ্টাও করা হয়েছে। তবে এসব এলাকার কোনো মানুষও আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। সবাই নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করেছেন। গৃহপালিত পশুপাখিও আগের অবস্থানেই ছিল। মেঘনার ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে তারা এখন অদম্য সাহসী।
[৫] স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকান আলী, আইয়ুব মিয়া, হুমায়ুন কবির ও সেকান্তর আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মেঘনা উত্তাল হয়ে উপকূলে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অতীতের মতো এসব এলাকার বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে। গত দুদিনে কমলনগর উপজেলার নাসিরগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে।
[৬] নাসিরাগঞ্জ এলাকার লোকজন জানান, তারা পৈতৃকভাবে মৎস্য শিকারি। ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, বুলবুল এবং আম্ফানের আঘাতে নিঃস্ব হয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষ। এখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও সরকার এই এলাকার নদী ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
[৭] কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, দু-তিনটি বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের দ্রুত বাঁধ সংস্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পানিবন্দি দেড় শতাধিক পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
[৮] রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন বলেন, মেঘনার জোয়ারে কিছু কাঁচা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া তেমন বেশি প্রভাব রামগতিতে পড়েনি। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
[৯] লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে লক্ষ্মীপুরে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রচারণা চালানো হয়েছে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য। একই সঙ্গে মেঘনা তীরবর্তী বাসিন্দাদের জন্য দুর্যোগ মুহূর্তে ২৭৯ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৪ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ৯ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ১৩ লাখ টাকা মজুত রাখা হয়েছে। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :