শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০২১, ০৩:৫৬ রাত
আপডেট : ২২ মে, ২০২১, ০৩:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধানের জেলা নওগাঁ এখন আমেরও

ডেস্ক রিপোর্ট : ধান উত্পাদনের জন্য বিখ্যাত নওগাঁ জেলা এখন আম উত্পাদনের বাণিজ্যিক রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে আম উত্পাদনে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে নওগাঁ জেলা। গত বছরের মতো এ বছরও দেশে সবচেয়ে বেশি আম উত্পাদন হবে নওগাঁয়। এ বছর সবচেয়ে বেশি আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নওগাঁয়। ইত্তেফাক

চলতি বছরে জেলায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। অন্য ফসলের চেয়ে আম চাষে লাভজনক হওয়ায় আগামীদিনে আরো বড় পরিসরে নওগাঁর কৃষক ও আমচাষিরা আমবাগান গড়ে তুলতে ঝুঁকে পড়বেন। যে হারে নওগাঁয় দিনদিন আম চাষের আবাদ বাড়ছে, উত্পাদনের ধারা বৃদ্ধি রাখলে দেশের অর্থনীতিতে আম বিশেষ অবদান রাখবে। নওগাঁ জেলায় অন্তত ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নওগাঁয় দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ধান উত্পাদনের জন্য বিখ্যাত নওগাঁ জেলা। এ জেলাতে আমন, বোরো ও আউশ ধান চাষ হয়ে থাকে। জেলায় প্রতি বছর ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উত্পাদন হয়। জেলার চাহিদা ৪ লাখ মেট্রিকটন চাল বাদে উদ্বৃত্ত বাকি চাল সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। ধানকে কেন্দ করেই জেলায় যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে তার অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। কৃষিই নওগাঁর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল চাবিকাঠি। কাটারিভোগ, সুগন্ধি আতপ, জিরাশাইল চালসহ উন্নতমানের চালের জন্য এই জেলা বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্তু গত ১০ বছরে ধানের এই রাজ্যে ঘটেছে আমের বিপ্লব।

পুরানো ঢাকার বাদামতলী ঘাট হচ্ছে দেশের ফলের প্রধান পাইকারি বাজার। এখানে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ এখন দেশের প্রধানতম আমের বাজার হয়ে উঠেছে। সেখানকার গাছগুলো নতুন। ফলে দীর্ঘকাল ধরে সেখানে উন্নত জাতের আম পাওয়া যাবে। ফলে, পাইকার ও আড়তদাররা ব্যবসার জন্য এখন নওগাঁ জেলার দিকে ঝুঁকছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় গত বছরের ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি আম চাষ করা হয়েছে। যা থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে থেকে আড়াই লাখ মেট্রিকটন আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আম উত্পাদনের আরেক জেলা রাজশাহী। সেখানে ১৮ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার ১০০ মেট্রিকটন আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নাটোরে আম চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পুরাতন জাতের ( ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলি) বড় বড় আম গাছ রয়েছে। ফলে সেই গাছগুলো থেকে প্রতি বিঘায় বেশি আম উত্পদন করা সম্ভব হয় না এবং দামও উন্নত জাতের আমের চেয়ে তুলনামূলক কম। অথচ নওগাঁয় সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট উপজেলা নতুন ও উন্নত জাতের আম (আম্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, নাগফজলি, ঝিঁনুক) চাষ করা হচ্ছে। এই নতুন ও উন্নতজাতের আম প্রতি বিঘায় বেশি লাগানো যায়। ফলে বেশি উত্পাদন যেমন সম্ভব হয় অন্য দিকে দামও ভালো পেয়ে থাকেন নওগাঁর কৃষকরা। গত ১০ বছরে আম চাষাবাদের ফলে পালটে গেছে এই এলাকার চিত্রপট।

আমের রাজধানী :রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে, নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ শুরু হওয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমগাছ রোপণ করা হয়েছে। এই গাছ রোপণের ঘনত্ব বেশি থাকায় নওগাঁ জেলার আম উত্পাদন অন্য জেলাগুলোর চাইতে বেশি। সে কারণেই নওগাঁকে বলা হচ্ছে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট গড় আম উত্পাদন হয় ১২ লাখ টন। মোট উত্পাদনের অর্ধেকের বেশি আম আসে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো থেকে। বাকি অর্ধেকের এক ভাগেরও কম আসে রংপুর ও খুলনা বিভাগ থেকে এবং বাকি অংশ আসে দেশের অন্য পাঁচটি বিভাগ থেকে।

এদিকে জেলায় গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আম ভাঙা শুরু হয়েছে। শুক্রবার গুটি আম ভাঙা শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও ২৭ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ আম, ২ জুন থেকে খিরসা পাত ও হিমসাগর আম, ৪ জুন থেকে নাগফজলি আম, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া আম, ২০ জুন থেকে ফজলি আম, ২২ জুন থেকে আম্রপালি আম এবং ৮ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারী-৪ ও ঝিনুক জাতের আম ভাঙা শুরু হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

মাটির বৈশিষ্ট্যগত কারণে নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আমের ভরা মৌসুমে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও পাইকারি বাজার গড়ে না তোলায় আমচাষিরা নায্য মূল্য পান না। জেলায় আগামীদিনে আরো অধিক আম উত্পাদন করার লক্ষ্যে আম গবেষণাকেন্দ , পাইকারি বাজার ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নওগাঁ জেলায় গুটি, ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষিরসাপাতি, মোহনভোগ, আশ্বিনা, গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, বারি-৩, ৪ ও ১১, নাগফজলি, গৌড়মতি উন্নত জাতের আম চাষ হচ্ছে। এসব আমের বিশেষ জাতের মধ্যে আম ‘নাগফজলি’। এই নাগফজলি বিশেষ করে পত্নীতলা, বদলগাছী, ধামইরহাট ও মহাদেবপুরে চাষ হয়ে থাকে।

নওগাঁ কৃষি অধিদপ্তরর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে আম্রপালি ৭৬ শতাংশ, বারি-৪ আম ৬ শতাংশ, আশ্বিনা ৭ শতাংশ, ফজলি ৩ শতাংশ, ল্যাংড়া ৩ শতাংশ, ক্ষিরসাপাত ২ শতাংশ, গৌড়মতি ১ শতাংশ, কাটিমন ১ শতাংশ, অন্যান্য জাতের ১ শতাংশ জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। নওগাঁর প্রধান আম হচ্ছে আম্রপালি। এই আমের ওপর ভিত্তি করেই নওগাঁ ব্র্যান্ডিং হয়েছে।

নওগাঁ রজলা প্রশাসক হারুন-অর রশিদ বলেন, নওগাঁয় বেড়েই চলেছে আমের ফলন। এখন নওগাঁয় বেশি আম হচ্ছে আম্রপালি। বর্তমানে নওগাঁ থেকে সীমিত পরিমাণে আম বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ খান জানান, নওগাঁ অঞ্চলের আমে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। আম রফতানিকারক ‘ফ্রুটস নওগাঁ’র স্বত্বাধিকারী এনামুল হক জানান, গত পাঁচ বছর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে জেলার ব্র্যান্ড আম্রপালি আম পাঠিয়েছি। পোরশা উপজেলার আমচাষি রইচ উদ্দিন জানান, নওগাঁ জেলা সবার কাছে পরিচিত হওয়ার কারণ পোরশা, সাপাহারের ধান আর আম চাষ। তারা বলেন, আগে চারদিকে শুধু ধান খেত দেখা যেত। ২০০৯ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে ধান চাষের পাশাপাশি সব আমবাগান হয়ে যাচ্ছে। আমচাষি নওশাদ হোসেন জানান, গত বছর দুই বছর বয়সের আমবাগান থেকে চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার নতুন করে আবার ১৫ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। এবার ফল ভালো ধরেছে। গত বছর এক মণ আম ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়